খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে চাইলে...

ছবি: শামসুল হক

সন্তানকে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে চাইলে অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। যে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উঠে এসে বিশ্ব ক্রিকেট মাতাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ও বর্তমানে জাতীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও ছিলেন বিকেএসপির ছাত্র।

শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলাতেই আছে খেলোয়াড় তৈরির কারখানার ছাত্রছাত্রীদের প্রাধান্য। ফুটবলে উঠে এসেছেন মাসুদ রানা, হাসান আল মামুন, ফিরোজ মাহমুদ, মামুনুল ইসলামের মতো তারকারা। হকিতে আছেন মামুনুর রশিদ, রাসেল মাহমুদরা। এ ছাড়া একক খেলাগুলোতে তৈরি হয়েছেন শুটার আসিফ হোসেন, আবদুল্লাহ হেল বাকি, সাঁতারু মাহফুজার আক্তার শিলার মতো তারকারা।

আগের ১৮টি খেলার সঙ্গে এবার নতুন করে যোগ হয়েছে স্কোয়াশ। অন্য খেলাগুলো অ্যাথলেটিকস, ক্রিকেট, ফুটবল, আর্চারি, সাঁতার, কারাতে, বক্সিং, জুডো, উশু, জিমন্যাস্টিকস, বাস্কেটবল, টেনিস, হকি, ভলিবল, তায়কোয়ান্দো, শুটিং, টেবিল টেনিস ও কাবাডি।

ভর্তি পরীক্ষায় সময়

৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে দেশব্যাপী বাছাইপ্রক্রিয়া। গত শিক্ষাবর্ষের মতো এবারও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দিনাজপুর, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সূচি অনুযায়ী বাছাইপ্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে বিকেএসপির শাখাগুলোতে। রাজশাহী বিভাগে যেহেতু বিকেএসপির শাখা নেই, প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী জেলার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে। এ ছাড়া ঢাকার মূল শাখায় উপস্থিত থেকে পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম তো থাকছেই। এখানে ঢাকা বিভাগের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে পারবে ময়মনসিংহ বিভাগের ভর্তি–ইচ্ছুকরাও। একজন ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থী পৃথক পৃথক নিবন্ধনের মাধ্যমে একাধিক খেলার ওপর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। বাছাইপ্রক্রিয়ার বিস্তারিত জানা যাবে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে: http://www.bksp.gov.bd/

ভর্তির নিয়মকানুন

সাধারণত চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ভলিবলের ক্ষেত্রে নবম শেণি পর্যন্ত সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে বিশেষ ক্রীড়া মেধাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের জন্য বয়স, শ্রেণি ও উচ্চতা শিথিলযোগ্য।
বিকেএসপির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্দিষ্ট দিনে প্রশিক্ষণার্থীদের ভর্তি বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে সাধারণত স্বাস্থ্য ও বয়স দেখা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে দেখা হয় শারীরিক সক্ষমতা। তৃতীয় পর্বে শিক্ষার্থীকে মাঠে পাঠানো হয়। সেখানে আবেদন অনুযায়ী নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণদের পরবর্তী সময় সাত দিনের বাছাই ক্যাম্পে ডাকা হয়। সপ্তাহব্যাপী সকাল-বিকেল অনুশীলনের পর নেওয়া হয় লিখিত পরীক্ষা। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় খেলা ৭০, লিখিত পরীক্ষায় (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) ২০ ও ক্রীড়াবিজ্ঞানে ১০।

সন্তানকে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে চাইলে অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)
ছবি: প্রতীকী

স্বাস্থ্য পরীক্ষা (প্রথম ধাপ)

প্রথমেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসকেরা নির্ধারণ করে থাকেন আবেদনকারীর বয়স, উচ্চতা, ওজন ও শারীরিক কোনো ত্রুটি আছে কি না। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ‘ইয়েস’ কার্ড পেলেই আবেদনকারী খেলার মাঠে গিয়ে শারীরিক সক্ষমতা ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

শারীরিক সক্ষমতা (দ্বিতীয় ধাপ)

সাধারণত দেখা হয় স্পিড (গতি), স্ট্রেংথ (শক্তি), অ্যান্ডুরেন্স (দম), এজিলিটি (ক্ষিপ্রতা), ব্যালান্স (ভারসাম্য), ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা)।

ব্যবহারিক পরীক্ষা (তৃতীয় ধাপ)

সাত দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত লড়াইয়ে জায়গা করে নেওয়ার জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবেদনকারীদের খেলা অনুযায়ী নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। যেমন ক্রিকেটে ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য ব্যাটিং-বোলিং ড্রিল ও ফুটবলারদের জন্য স্কিল-গেম।
প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য এই তিনটি ধাপই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এক দিনে। এখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হয় সাত দিনব্যাপী বাছাই পরীক্ষায়।

সাত দিনব্যাপী বাছাইপর্ব

সপ্তাহব্যাপী বাছাইপর্বের ধাপটি পুরোপুরি আবাসিকভাবে পরিচালনা করা হয়। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের বিকেএসপির নিজস্ব হোস্টেলে রেখে আয়োজন করা হয় চূড়ান্ত নির্বাচনী পরীক্ষা। সপ্তাহব্যাপী সকাল-বিকেল অনুশীলনে তাদের মেধা ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে লক্ষ করা হয় আবেদনকারীর আচার-আচরণ। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তার জন্য ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসে পরীক্ষা হবে। আবার যে প্রতিযোগী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তার জন্য পঞ্চম শ্রেণির সিলেবাস।

ভর্তিপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান বলেন, ‘আমি নিজেই এবার আমার ফেসবুক পেজে বিকেএসপির ভর্তি বিজ্ঞপ্তির ভিডিও শেয়ার করেছি। কারণ, এবারের ভর্তিপ্রক্রিয়াটা পুরোপুরি ভিন্ন আমেজের হবে। উঁচু মানের ছয়জন বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছি। এর মধ্যে ফুটবলের জন্য আয়ারল্যান্ডের ও ক্রিকেটের জন্য নিউজিল্যান্ডের কোচ। হকির জন্য জাতীয় দলের সাবেক মালয়েশিয়ান কোচকে নিয়েছি। ভর্তি পরীক্ষার আগেই এসব কোচ নিয়োগ দেওয়া, যাতে সেরা প্রতিভাটা বাছাই করে প্রতিষ্ঠানে তুলতে পারি। তাই বিশেষভাবে এই ব্যাচের খেলোয়াড়দের প্রতি আমার প্রত্যাশাটা অনেক বেশি থাকবে। এ ছাড়া খেলোয়াড় বাছাইয়ে যেন কোনো রকম অস্বচ্ছতা না হয়, সেদিকেও আমি খেয়াল রাখব। খেলোয়াড় বাছাইয়ে আমার অবস্থান খুবই কঠোর। এর সঙ্গে বিন্দুমাত্র আপস হবে না। কোনো প্রকার অভিযোগ উঠলেই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন