চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন শেষ ৩০ এপ্রিল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষার্থীরা ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বরাবরের মতোই ১০০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। বহুনির্বাচনী পদ্ধতির এই ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে যাঁরা ২০১৮ সালে মাধ্যমিক বা সমমান ও ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, কেবল তাঁরাই ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ বছর অনিয়মিত (মানোন্নয়ন দেওয়া) শিক্ষার্থীদের আবেদন করার সুযোগ নেই।

আবেদন পদ্ধতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (https://admission.cu.ac.bd/) থেকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিস্তারিত জানতে ও আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন ফি বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক

এ বছর করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তির আবেদন ফি বাড়ানো হয়েছে সব মিলিয়ে ১০০ টাকা । গত বছর আবেদন ফি ছিল ৪৭৫ টাকা এবং প্রসেসিং ফি ছিল ৭৫ টাকা। সব মিলিয়ে সাড়ে ৫০০। এবার আবেদন ফি ৫৫০ টাকা এবং প্রসেসিং ফি ১০০ টাকা; মোট ৬৫০ টাকা।

জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলছেন, করোনার ধাক্কায় অনেকের আয় কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। এ মহামারির সময়ে ১০০ টাকা বাড়ার বিষয়টি যৌক্তিক নয়।

জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ নাসিম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আবেদন ফির হিসাবে দেশে যত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সবার চেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি কম। এবার নতুন সফটওয়্যারে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব মেনে পরীক্ষা নিতে হবে। গতবারের তুলনায় বেশি পালায় পরীক্ষা হবে। সব মিলিয়ে বাড়তি কিছু টাকা ধরা হয়েছে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

প্রতি ইউনিটে মানবণ্টন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এতে ৪ হাজার ৯২৬টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে আসন রয়েছে ১ হাজার ২১২টি, ‘বি’ ইউনিটে ১ হাজার ২২১টি, ‘সি’ ইউনিটে ৪৪১টি, ‘ডি’ ইউনিটে ১ হাজার ১৬০টি। উপইউনিটের মধ্যে বি১ ইউনিটে ১২৫টি ও ডি১ ইউনিটে ৩০টি আসন রয়েছে। এবার জেনে নেওয়া যাক ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি ইউনিটের বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টন ও ন্যূনতম পাস নম্বর কত।

‘এ’ ইউনিট: বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউট নিয়ে ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২০ নম্বরে হিসেব করা হবে। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ১৫, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও জীববিদ্যা প্রতিটিই ২৫ নম্বর করে (শিক্ষার্থীদের যেকোনো ৩টি বিষয়ে উত্তর দিতে হবে) থাকবে। পরীক্ষায় বাংলায় ন্যূনতম ৩, ইংরেজিকে ৪ নম্বর পেতে হবে। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

‘বি’ ইউনিট: কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউট নিয়ে ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২০ নম্বরে মধ্যে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ৩৫, ইংরেজিতে ৩৫, সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বর থাকবে। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

‘বি-১’ উপইউনিট: কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ অধিভুক্ত চারুকলা ইনস্টিটিউট, নাট্যকলা এবং সংগীত বিভাগ বি-১ উপইউনিটের অধীন। এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২০ নম্বরে মধ্যে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ৩৫, ইংরেজিতে ৩৫, সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বর থাকবে। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

‘সি’ ইউনিট: ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত সব বিভাগ নিয়ে ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২০ নম্বরে মধ্যে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৩০, হিসাব বিজ্ঞানে ৩৫ এবং ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগে (কারবার সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং ও বিমা) ৩৫ নম্বর থাকবে। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

‘ডি’ ইউনিট: সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত সব বিভাগ, আইন অনুষদের আইন বিভাগ, শিক্ষা অনুষদের ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ভূগোল, পরিবেশবিদ্যা এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পরীক্ষা হবে ‘ডি’ ইউনিটের। এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২০ নম্বরে মধ্যে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ৩০, ইংরেজিতে ৩০, বিশ্লেষণ দক্ষতায় ২০, সাধারণ জ্ঞান/গণিত/অর্থনীতিতে ২০ নম্বর থাকবে। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

‘ডি-১’ উপইউনিট: ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের জন্য পরীক্ষা হবে ‘ডি-১’ উপইউনিটে। এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২০ নম্বরে মধ্যে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বা ঐচ্ছিক ইংরেজিতে ৩৫, ইংরেজিতে ৩০, সাধারণ জ্ঞানে ৩৫ নম্বর থাকবে। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৩৫।

কোন ইউনিটে কবে পরীক্ষা

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘বি’ ইউনিটে ২২ ও ২৩ জুন, ‘ডি’ ইউনিটে ২৪ ও ২৫ জুন, ‘এ’ ইউনিটে ২৮ ও ২৯ জুন, ‘সি’ ইউনিটে ৩০ জুন এবং ‘বি-১’ ও ‘ডি-১’ উপ-ইউনিটে ১ জুলাই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রবেশপত্র ডাউনলোড

পরীক্ষার্থীরা ১ জুন থেকে ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী শাটল ট্রেনের চিত্র এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষে ক্যাম্পাস থেকে শহরে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার দিকে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ফাইল ছবি

আবেদন সংশোধন

১২ এপ্রিল থেকে ৯ মে ২০২১ পর্যন্ত আবেদনপত্র সংশোধন করা যাবে। আবেদনপত্রের যেকোনো প্রকার সংশোধন ও ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত যেকোনো ডকুমেন্টের ডুপ্লিকেট কপি নেওয়ার জন্য ৩০০ টাকা সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হবে।

আসনসংখ্যা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এতে ৪ হাজার ৯২৬টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে এ ইউনিটে আসন রয়েছে ১ হাজার ২১২টি, বি ইউনিটে ১ হাজার ২২১টি, সি ইউনিটে ৪৪১টি, ডি ইউনিটে ১ হাজার ১৬০টি। উপ-ইউনিটের মধ্যে বি১ ইউনিটে ১২৫টি ও ডি১ ইউনিটে ৩০টি আসন রয়েছে।