বেলজিয়ামে পড়াশোনার আদ্যোপান্ত

ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম। দেশটির জনসংখ্যা ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন। ৩০ হাজার ৫৩৮ বর্গকিলোমিটারের দেশটির অন্যতম ভাষা হলো ডাচ ও ফ্রেঞ্চ। পশ্চিম ইউরোপের উন্নত এই দেশ বিশ্বের অন্য দেশের মতো উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পছন্দের জায়গা হতে পারে। সেনজেনভুক্ত ছোট এ দেশের রাজধানী ব্রাসেলস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস আছে বেলজিয়ামে। তুলনামূলক কম খরচে শিক্ষা গ্রহণ এবং কাজের সুযোগ আছে। তাই দেশটিতে এখন পাড়ি জমান অসংখ্য শিক্ষার্থী।

বেলজিয়ামের শিক্ষার মান উন্নত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অর্থনীতি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড আইটি, পদার্থ, পলিটিক্যাল সায়েন্স, প্রকৌশল, আইটি, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায় শিক্ষা পড়ার জন্য ভালো দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বেলজিয়ামে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংও ভালো।

বেলজিয়ামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত ডাচ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়।

অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে পড়াশোনা করা যায়। তাই বেলজিয়ামে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হলে ডাচ ভাষার ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ থাকতে হয়। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ দশমিক ৫ আইইএলটিএস স্কোরও চায়। তবে যেসব শিক্ষার্থীর স্নাতকের মাধ্যম ইংরেজি ছিল, তারা আইইএলটিএস স্কোর ছাড়াই মাস্টার্সে আবেদন করতে পারেন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবেদনের জন্য একাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মার্কস থাকা ভালো।

বেলজিয়ামে পড়াশোনার খরচ ইউরোপের অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক কম। নন-ইউরোপিয়ান দেশ থেকে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে টিউশন ফি দিতে হয় ৮৫০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ ইউরো পর্যন্ত। তা ছাড়া বিভিন্ন রকমের শিক্ষাবৃত্তির সুযোগও রয়েছে দেশটিতে। থাকা-খাওয়া, অন্যান্যসহ মাসে ৪৫০ থেকে ৬৫০ ইউরো খরচ হবে।

ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের মতো বেলজিয়ামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ব্যাচেলর ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি ও পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন কোর্স বিদ্যমান। এখানে ব্যাচেলর কোর্সগুলো তিন–চার বছর মেয়াদের। এখানে মডার্ন হিস্ট্রি, লাতিন, গ্রিক, জার্মান, আর্কিওলজি, নরডিক স্টাডিজ, কমিউনিকেশন স্টাডিজ, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ল, সোশিওলজি, জিওগ্রাফি, বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, জেনেটিকস, মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স, প্যাথলজি, সার্জারি, ডেন্টিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি, রেডিওলজি, টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন, আর্কিটেকচার, আরবান প্ল্যানিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনমিকস, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ফার্মাসি, ভেটেরিনারি, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিকস, ম্যাথমেটিকস, হর্টিকালচার ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাটিসটিকসসহ নানা যুগোপযোগী বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি দিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বেলজিয়ামে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫-২০ ঘণ্টা পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ মেলে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ৯০ দিন ফুলটাইম কাজ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।

থাকাখাওয়া বাবদ মাসে ৪৫০-৬৫০ ইউরো খরচ হতে পারে। পাঁচ বছর থাকার পর কিছু শর্ত মেনে পিআর/স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

বেলজিয়ামে পড়াশোনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্য ও প্রসপেকটাস চেয়ে আবেদন করলে তারা বিস্তারিত প্রসেসিং প্ল্যান আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে। সাধারণত একবার আবেদন করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ থাকে শিক্ষার্থীদের। আবেদন করার জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভর্তির তারিখ দেখতে হবে। আবেদন করার জন্য এসএসসি, এইচএসসি এবং অনার্সের সার্টিফিকেট, মোটিভেশনাল লেটার, সিভি, রেফারেন্স লেটার দরকার হয়। শিক্ষা সনদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার কর্তৃক সত্যায়িত করার পর শিক্ষা বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বেলজিয়াম কনস্যুলেট থেকে সত্যায়িত করাতে হবে। এরপর এসব পেপার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা বরাবর ডাকযোগে পাঠাতে হবে। প্রাথমিক আবেদন সাধারণত ই-মেইল করা যায়।

বেলজিয়ামের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, তাই ভিসা আবেদন করতে হবে ভারতে বেলজিয়াম দূতাবাস থেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার, আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র বা ব্যাংক সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, শিক্ষাগত কাগজপত্র, আনুষঙ্গিক কাগজপত্র দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। বিস্তারিত তথ্য জানতে বেলজিয়াম দূতাবাস অথবা বেলজিয়ামের স্টাডি পোর্টালে ঢুঁ মারতে পারেন http://www.studyinbelgium.be/en।

বেলজিয়ামের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের ঠিকানা: