লটারিতে ভর্তিসহ দুই বিকল্প প্রস্তাব

বর্তমানে সারা দেশে প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি করা হয় পরীক্ষার মাধ্যমে।

  • ঢাকা মহানগরীতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৮টি। এর মধ্যে তিনটি বিদ্যালয়ের পৃথক তিনটি শাখা আছে।

  • তিন ভাগে ৯ দিনে ঢাকার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনার কারণে এবার ঢাকা মহানগরীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। একটি হলো, প্রথম শ্রেণির মতো সব শ্রেণিতেই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা। আরেকটি হলো, মোট ৯ দিনে সব কটি বিদ্যালয়ের (৩৮টি) পরীক্ষা নেওয়া। এত দিন ভর্তি পরীক্ষা তিন দিনে নেওয়া হতো। এভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এবার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের পরিবর্তে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে। এখন তাঁরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন।

বর্তমানে সারা দেশের স্কুলগুলোয় প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় পরীক্ষার মাধ্যমে। আর নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলের (জিপিএ) ভিত্তিতে। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে নবম শ্রেণিতে এবার জেএসসি ও জেডিসির ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই।

ঢাকা মহানগরীতে ৩৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাদা তিনটি শাখা যুক্ত আছে (ফিডার শাখা নামে পরিচিত)। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্তরেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে এসব বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের আগ্রহ বেশি। বিদ্যালয়গুলোকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এসব বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মোট আসন আছে সাড়ে ১১ হাজারের মতো।

প্রতিবছর নভেম্বর মাসে বিদ্যালয়গুলোর ভর্তির পদ্ধতি ঠিক করে ডিসেম্বরের শুরুতে আবেদন নেওয়া শুরু হয়। এরপর লটারি ও ভর্তি পরীক্ষা শেষে ডিসেম্বরের মধ্যেই ভর্তির কাজটি শেষ করা হয়। ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নতুন শিক্ষাবর্ষ। কিন্তু এ বছর পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। করোনার সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে।

তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঠিক করবে, কীভাবে ভর্তির কাজটি হবে।
মো. এনামুল হক হাওলাদার , মাউশির উপপরিচালক

এ অবস্থায় আসন্ন শিক্ষাবর্ষের ভর্তির কাজটি কীভাবে হবে, সেটি নিয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগে এ নিয়ে মাউশির উদ্যোগে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। সেখানেই সব শ্রেণিতে লটারিতে ভর্তি অথবা মোট ৯ দিনে সব কটি বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে বলা হয়েছে। তবে আবেদন–সংক্রান্ত কাজটি হবে অনলাইনে।

মাউশির উপপরিচালক মো. এনামুল হক হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঠিক করবে, কীভাবে ভর্তির কাজটি হবে।

প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি লটারিতেই হবে। কিন্তু তাঁরা চান একসঙ্গে অন্যান্য শ্রেণির ভর্তির কাজটিও করতে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।
শাহান আরা বেগম , মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ

সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বেসরকারি বিদ্যালয়

সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবছর দুই ধরনের নীতিমালা করে সরকার। মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি লটারিতেই হবে। কিন্তু তাঁরা চান একসঙ্গে অন্যান্য শ্রেণির ভর্তির কাজটিও করতে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সরকার যেভাবে বলবে, সেভাবেই ভর্তির কাজটি করবেন।

বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি কীভাবে হবে—এই প্রশ্নের জবাবে মাউশির একজন কর্মকর্তা বললেন, করোনার কারণে যদি সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া যায় তাহলে বেসরকারি বিদ্যালয়েও নেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতেও হয়তো লটারির মাধ্যমেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।