সৈয়দপুরের এক কলেজ থেকেই মেডিকেলে ৪০ জন

নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে পাঠদান চলে গ্রিন, ক্লিন, এনজয়েবল ক্লাসরুম লার্নিং পদ্ধতিতে। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও মননশীলতা বাড়ছে। এ বছর ওই প্রতিষ্ঠানের ৪০ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ। এটিকে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন কলেজের শিক্ষকেরা।

সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। অতীতে নাম ছিল টেকনিক্যাল কলেজ। বাংলায় বলা হতো সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ রেখেছে। কলেজটিতে কেবলমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানায়, ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানেও গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল, এখান থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়।

কলেজটি থেকে প্রতিবছর উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাচ্ছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছর ওই কলেজ থেকে ২৮০ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ২৭৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৪০ জন। এর আগে ২০১৯ সালে ৩৮ জন, ২০১৮ সালে ৩৬ জন শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

কলেজটির শিক্ষাদান বিষয়ে অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বলেন, ‘এ কলেজে ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্বচ্ছ। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এ কলেজে পড়ার সুযোগ পান। কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা একধরনের সেতুবন্ধ তৈরি করি। ক্লাসরুমেই সম্পূর্ণ পাঠদান সম্পন্ন করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখা হয়। তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি কোনো চাপ রাখা হয় না। কোভিডকালে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে পাঠ–সম্পর্কিত উপদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ওদিকে আমরা বিশেষ ক্লাস নিয়েছি শিক্ষার্থীদের জন্য।’ তিনি আরও বলেন, গ্রিন, ক্লিন, এনজয়েবল শিক্ষাব্যবস্থা বজায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করে এখানে। এতে করে শিক্ষার মান বাড়ছে।

নোশিন সানজিদার বাড়ি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায়। বাবা আবু সায়েদ বিমা কোম্পানিতে কাজ করেন। নোশিন এ কলেজের শিক্ষার্থী। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোভিডকালে কলেজ বন্ধ ছিল। এ সময় মুঠোফোনে শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়েছি। এ ছাড়া ফেসবুক গ্রুপে পড়াশোনার ওপরে অনেক আলোচনার সুযোগ ছিল।’

আবিদা সুলতানা থাকেন সৈয়দপুর শহরের অফিসার্স কলোনিতে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। পুরাতন বাবুপাড়ার সানজিদা আকতারের বাবাও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশটা ব্যতিক্রম। ক্লাসের বাইরেও শিক্ষকেরা আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্বসুলভ।’

অভিভাবক আবু সায়েদ বলেন, ‘কলেজ থেকে আমাদের নানা রকম নির্দেশনা দেওয়া হতো। অভিভাবক হিসেবে এসব প্রয়োগ করেছি সন্তানের ওপর।’ তিনি বলেন, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজটি এ জনপদের একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।

কলেজটির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক নুশরত জাহান। সফলতার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পড়ানো হলো একটি সমন্বিত উদ্যোগ। শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া আছে বলেই আমরা সফল হতে পেরেছি।’ তিনি সব শিক্ষার্থীর সাফল্য কামনা করেন।

বাংলার প্রভাষক সোহেল আরমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রধান অস্ত্র মনোযোগ। আমাদের অধ্যক্ষ প্রতিটি ক্লাস তদারকি করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মনস্তাত্ত্বিক অনুপ্রেরণা পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।’