পথ দেখায় অলিম্পিয়াড

>কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা। আসছে পুরস্কারও। তবে পুরস্কারের চেয়ে বড় অর্জন হলো, এই প্রতিযোগিতাগুলোর সুবাদে গণিত, পদার্থবিজ্ঞানসহ নানা বিষয় চর্চা করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। একাডেমিক পড়ালেখার বাইরে শিক্ষার্থীরা নিজের আগ্রহে শিখছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই ভিনদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তি পেয়ে পড়তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গবেষণা করছেন, উদ্যোক্তা হচ্ছেন। স্কুলজীবন থেকে নিজেকে তৈরি করার একটা বড় সুযোগ এই অলিম্পিয়াড। বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের খবর জানাচ্ছেন মো. সাইফুল্লাহ
আইপিএইচওতে বাংলাদেশ দল
আইপিএইচওতে বাংলাদেশ দল


পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন বাংলাদেশের ছেলে ফাহিম তাজওয়ার। ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ডে আর এ বছর ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে (আইপিএইচও) পরপর দুই বছর ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন তিনি। জানালেন, অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতাই তাঁর স্ট্যানফোর্ডে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে এসেছে। ফাহিম বলছিলেন, ‘রাজশাহীর গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল আর রাজশাহী কলেজে পড়েছি। স্কুল-কলেজে যারা আমার সহপাঠী ছিল, তারা কেউই আসলে এত দূর এসে পড়ার কথা ভাবে না। আমি এই সাহস পেয়েছি পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড থেকেই। অনেক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, যাঁরা প্রিন্সটন, এমআইটিতে পড়ছেন। আবার কয়েকবার আইপিএইচওতে অংশ নিয়েছি বলে আমার ইংরেজির দক্ষতা বেড়েছে, টোয়েফলে ভালো স্কোর পেয়েছি। তাই সমস্যা হয়নি।’
সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে পারে। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন করে বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড কমিটি। এ বছর থেকে এই আয়োজনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে প্রথম আলো।
পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: bdpho.org

এ বছর আইএমও তে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের সদস্যরা
এ বছর আইএমও তে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের সদস্যরা


গণিত অলিম্পিয়াড

প্রতিবছর সারা দেশে বিরাট পরিসরে আয়োজিত হয় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া যেকোনো শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। আঞ্চলিক উৎসব, জাতীয় উৎসব শেষে ক্যাম্পে অংশ নেয় বাছাইকৃত সেরা কয়েকজন। লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করতে তারাই চলে যায় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও)।
এ বছর সারা দেশ থেকে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিল ২২ হাজার শিক্ষার্থী। সেরা ছয়জন ঘুরে এসেছে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক উৎসব থেকে। ফলাফল মন্দ হয়নি। দুটি রৌপ্য, দুটি ব্রোঞ্জ আর দুটি অনারেবল মেনশন এসেছে বাংলাদেশের ঘরে। এর আগে আইএমও থেকে যাঁরা পদক এনেছেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই এখন এমআইটি, হার্ভার্ড, কেমব্রিজের মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ছেন। গুগল, ফেসবুকের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন কেউ কেউ। প্রত্যেকের ভেতরেই সেই স্কুলজীবনে গণিতের প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনে দিয়েছিল গণিত অলিম্পিয়াড। এই ভালোবাসা তাঁদের ‘শক্তি’ হয়ে উঠেছে।
এ বছর আইএমওতে রৌপ্যপদক পেয়েছে চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। পঞ্চম শ্রেণি থেকে নিয়মিত গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে সে। জাওয়াদ বলছিল, ‘স্কুল-কলেজে গণিত আমরা কেবল শেখার জন্য শিখি। কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াডে গেলে অঙ্কের মজাটা পাওয়া যায়। কেউ যদি গণিত ভালোবাসে, তাহলে এই মজার জন্য হলেও অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া উচিত।’ জাওয়াদের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছে সে।
গণিত অলিম্পিয়াড সম্পর্কে বিস্তারিত: matholympiad.org.bd

আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল
আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল


জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড

২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা মূল পর্বে অংশ নিতে পারে। এ বছর জাতীয় পর্যায়ে ২২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। মাত্র দুই বছর অংশ নিলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ফলাফল মোটামুটি ভালো।
অনেকেই অলিম্পিয়াডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভিনদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন মাইশা এম প্রমি। এমআইটিতে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এই প্রাক্তন ছাত্রী। এ বছর যুক্তরাজ্যে আর গত বছর ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে মেধাতালিকায় ছিল মাইশার নাম। মাইশা বলছিলেন, ‘অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছি বলেই এমআইটি বুঝতে পেরেছে, জীববিজ্ঞান বিষয়টার প্রতি আমার গভীর আগ্রহ আছে। তা ছাড়া অলিম্পিয়াড থেকে ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে সমস্যার সমাধান করা শেখে। বিভিন্ন দেশের, সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। এসব অভিজ্ঞতাকে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।’
দেশে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজনে সহায়তা করছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: bdbo.org