প্রশ্নের মুখে গবেষণা প্রবন্ধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) দুই শিক্ষক নিজেদের পদোন্নতির আবেদনের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা দুটি প্রবন্ধ জমা দিয়েছেন। কিন্তু একটি শব্দ ও পাঁচটি বাক্য ছাড়া প্রবন্ধ দুটির লেখ্য বর্ণনা হুবহু এক হওয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দুই শিক্ষকের একটি প্রবন্ধ মালয়েশিয়াভিত্তিক এক জার্নালে গত বছর ছাপা হয়। একই প্রবন্ধ চলতি বছর অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আরেকটি জার্নালে ছাপার জন্য মনোনীত হয়েছে। গবেষণা দুটির লেখক তিনজন। শিক্ষক দুজন হলেন মুশতাক আহমেদ ও রিদওয়ানুল হক। দুজনই সহযোগী অধ্যাপক। তাঁরা অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির আবেদন করেছেন। লেখকদের অন্যজন গোলাম শওকত হোসেন তাঁদের অধীনে পিএইচডি করেছিলেন।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিভাগের পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় তঞ্চকতার অভিযোগে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ওমর ফারুককে থিসিস নকল ও জালিয়াতির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে এই লেখকদের একটি প্রবন্ধ অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক জার্নাল অব সোশ্যাল বিজনেস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রিসার্চ-এ প্রকাশের জন্য মনোনীত হয়। গত বছর ‘একই ধরনের’ প্রবন্ধ সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল অব কনটেম্পরারি বিজনেস, ইকোনমিকস অ্যান্ড ল নামের মালয়েশিয়াভিত্তিক জার্নালে প্রকাশিত হয়।

প্রবন্ধ দুটি মিলিয়ে দেখা যায়, ভূমিকা থেকে শুরু করে তথ্যসূত্র পর্যন্ত হুবহু এক। শুধু বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে করা গবেষণার সারাংশে পাঁচটি অতিরিক্ত লাইন যুক্ত করা হয়েছে। মোট আটটি অধ্যায়ের এই দুটি প্রবন্ধের সব কটি ‘সরকারি’ শব্দের জায়গায় ‘বেসরকারি’ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আলোচনা অংশের একটি জায়গায় ‘সরকারি’ শব্দটিই রয়ে গেছে। দুটি প্রবন্ধেরই এক জায়গায় লেখা, ‘এ ধরনের গবেষণায় গবেষকদের অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়, কারণ বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে কোনো মানবসম্পদ বিভাগ থাকে না।’

দুটো প্রবন্ধেই গবেষকেরা লিকার্ট স্কেল পদ্ধতিতে ১০০ জন রোগীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। প্রথমটিতে ৫ মানদণ্ড ও পরেরটিতে ৭ মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু গবেষণার ফলাফল অংশে প্রথম প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে, বিশ্বাসযোগ্যতার মাত্রা শূন্য দশমিক ৬৯৭। পরের প্রবন্ধটিতে একই ফলাফল সংবেদনশীলতার মাত্রায় দেখানো হয়। দুই প্রবন্ধেই বাকি পাঁচটি ফলাফল ঘুরেফিরে একই।

জানতে চাইলে গবেষকদের একজন রিদওয়ানুল হক প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, এটি খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। ‘সার্ভকোয়াল’ নামের একটি মডেল ব্যবহার করায় এই সাদৃশ্য দেখা গেছে। এই মডেলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মান যাচাই করলেও একই রকম ফল হতে পারে। দেখতে হবে ফলাফল শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক শূন্যের মধ্যে আছে কি না। তিনি বলেন, ‘এটি আপনারা বুঝবেন না। যাঁরা মার্কেটিং বিষয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা ভালো বুঝবেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একজন অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগের একজন অধ্যাপক ও আইবিএর একজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা সবাই বলেন, গবেষণা প্রবন্ধ দুটির মূল ত্রুটি ভাষাগত মিল। একটি প্রবন্ধ যে ভাষায় লেখা হয়েছে, অন্যটিতে শুধু একটি শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে। আরেকজন অধ্যাপক বলেন, নিজের করা গবেষণা থেকে কোনো তথ্য নিলে তা-ও তথ্যসূত্রে উল্লেখ করতে হয়। হুবহু করাটা অন্যায়।

প্রবন্ধ দুটিতে ২০টি করে তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রবন্ধটিতে প্রথম প্রবন্ধটি তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা নেই। এ সম্পর্কে গবেষক রিদওয়ানুল হক বলেন, ‘আমি একই বিষয়ে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর গবেষণা করেছি। সেখানে সব বক্তব্য তো এক রকমই থাকবে।’

প্রবন্ধের বাকি দুই লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।