শুধু আইডিয়া কি যথেষ্ট?

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

সফল ব্যবসা মানেই একটি আইডিয়া বা ধারণার প্রতিফলন। কিন্তু সব আইডিয়া বা ধারণা দিয়েই কি সফল ব্যবসা শুরু করা উচিত? 

উদ্যোক্তা, আইডিয়া, সফলতা-সম্ভাবনা একই সূত্রে গাঁথা। সব আইডিয়া বা ধারণাকে যেমন বাস্তবে রূপদান সম্ভব নয়; ঠিক তেমনি বাস্তবায়ন করলেই সব আইডিয়া সফলতার দ্বার উন্মোচন করতে পারে না। একজন মানুষকে সফল উদ্যোক্তা হতে হলে বাস্তবায়নের আগে নিজের ধারণাটির সুযোগ-সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার ভিত একাধিক ব্যর্থতার সম্মিলনে তৈরি হতে পারে।
সফল এবং ব্যর্থ উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সফলরা তাঁদের আইডিয়াকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা করার সুযোগে রূপান্তর করতে পারে। বাস্তবতার আলোকে যদি একটি আইডিয়া সুযোগ হিসেবে প্রমাণিত হয়, তাহলে এটির বাস্তবায়ন সফলতার সমানুপাতিক হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
রেইড হোফম্যান নামে একজন মার্কিন লেখক ও উদ্যোক্তা ২০১৬ সালে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের একটি নিবন্ধে লিখেছেন, একটি আইডিয়াকে সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য আগে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত:
১. আইডিয়াটিকে কি দীর্ঘ মেয়াদে পণ্য কিংবা সেবায় রূপদান করা সম্ভব?
২. কারিগরি এবং প্রযুক্তিগতভাবে বর্তমান পরিবেশে এই আইডিয়া কি বাস্তবসম্মত?
৩. চলমান কোনো বাজারের চাহিদা কি এর দ্বারা পূরণ করা সম্ভব? অথবা এটি কি সম্পূর্ণ নতুন বাজার এবং চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম?
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাকভাবে পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে ব্যবসা সফল হবে কি না।
বিষয়টিকে একটি সফল আইডিয়ার উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করা যায়। জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন টিভি নেটফ্লিক্সের কথা আমরা সবাই জানি। ১৯৯৭ সালের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে টেলিভিশনকে ইন্টারনেট সেবায় সংযুক্ত করার মতো একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা কাজ করেছে। এর সফলতার কারণ বিশ্লেষণ করলে তিনটি বিষয় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। প্রথমত, নেটফ্লিক্স একটি অনলাইন ওয়েব এবং সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম, যেটি সাবস্ক্রিপশন প্রক্রিয়ায় কাজ করে। ফলে আইডিয়াটিকে একটি লাভজনক সেবায় রূপান্তর করা তাদের জন্য সম্ভবপর ছিল। দ্বিতীয়ত, কারিগরি এবং প্রযুক্তিগতভাবে আইডিয়াটি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, নেটফ্লিক্স যখন বাজারে আসে, তখন এটি সম্প্রচার মাধ্যমে অনেক বেশি অবদান রাখে, যা এর অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে।
এবার যদি বলা হয়, মাইক্রোসফটের মিউজিক স্ট্রিমিং সেবা ‘যুন’–এর কথা, তাহলে দেখা যায় ১০ বছর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় সেবাটি বন্ধ করা হয়। উল্লেখ্য, তিনটি প্যারামিটারের আলোকে যুনের ব্যর্থতার কারণ স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। প্রথমত, মাইক্রোসফট যুনকে তাদের একটি ডিজিটাল প্রোডাক্টে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, সার্বিক দিক বিবেচনায় এটা প্রযুক্তিগতভাবে বাস্তবসম্মত ছিল। মূল সমস্যাটি হয়েছে তিন নম্বর ধাপে। অ্যাপলের আইপড এবং আইটিউনসের সঙ্গে বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাইক্রোসফট যুন বাজারে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় যুন এমন কোনো বিশেষ অবদান রাখতে পারেনি, যাতে বাজার মাইক্রোসফটের পক্ষে আসবে। অবশেষে সেবাটি বন্ধ করে দিতে হয়।
একজন উদ্যোক্তাকে সফল হতে হলে সার্বিক দিক বিবেচনায় বাস্তবসম্মত আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে। সমস্যার সমাধান অনেকের কাছেই থাকতে পারে, কিন্তু চমকপ্রদ সমাধান সবাই দিতে পারবে না। যুনের বাজার দখলে ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ এই বিষয়কেই স্পষ্ট করে। আইডিয়া নিয়ে একটি সঠিক বিশ্লেষণ একজন উদ্যোক্তাকে সফলতার চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে।

স্টার্টআপ

আইডিয়াটিকে কি পণ্য বা সেবায় রূপদান
করা সম্ভব?

প্রযুক্তিগতভাবে কি এটি বাস্তবসম্মত?

আইডিয়াটি কি চলমান বাজার

চাহিদা পূর্ণ করে? অথবা

নতুন বাজার সৃষ্টি করে?

সফল/ব্যর্থ

১. এয়ারবিএনবি

সফল

২. মাইক্রোসফট যুন

x

ব্যর্থ

৩. ইনস্টাগ্রাম

সফল

৪. ফেসবুক

সফল

৫. বেটাম্যাক্স

x

x

ব্যর্থ

লেখক: ইনোভেশন, ক্রিয়েটিভিটি ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক এবং সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়