কেন পড়ব স্থাপত্য

>

সৃজনশীল পড়ালেখার আনন্দ আছে স্থাপত্যে। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে
সৃজনশীল পড়ালেখার আনন্দ আছে স্থাপত্যে। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কোন বিষয়টিতে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। ‘স্বপ্ন নিয়ে’র এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। আজ স্থাপত্য সম্পর্কে বলেছেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক মাসরূর মামুন হোসেন

কাদের পড়া উচিত

স্থাপত্য একটি সৃষ্টিশীল বিষয়, আর নতুন কিছু সৃষ্টি করা মোটেই সহজ কাজ নয়। যারা ছবি আঁকতে পছন্দ করে, হস্তশিল্প বা কারিগরি শিল্পে আগ্রহী কিংবা ইন্টারনেটের সাহায্যে ‘ফাইভ মিনিটস ক্র্যাফটস’ দেখে কিছু বানিয়ে ফেলতে পারে, স্থাপত্য বিষয়টা তাদের ভালো লাগার কথা। যারা আলোকচিত্রে আগ্রহী, সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত থাকতে পছন্দ করে বা খেলাধুলায় আগ্রহী, তারাই স্থাপত্যের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।

যেহেতু স্থপতিদের কাজই হচ্ছে মানুষের বসবাস উপযোগী স্থান তৈরি করা, তাই এটি মূলত ত্রিমাত্রিক জিনিস নিয়ে কাজ করার মতো একটি বিষয়। যদি তোমার বিভিন্ন জিনিসকে ত্রিমাত্রিকভাবে দেখার মতো সামর্থ্য থাকে, তাহলে তুমি স্থাপত্যের পড়ালেখায় এগিয়ে থাকবে। যেমন তোমার ঘরের আয়তনে কত বড়, কতটুকু বিস্তৃত, সে সম্পর্কে ধারণা থাকা বা নিজের আশপাশ নিয়ে তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, বিভিন্ন ধরনের ধাঁধা সমাধান করার ঝোঁক থাকা স্থাপত্যে পড়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো ‘বোনাস’।

যা পড়ানো হয়

একজন স্থপতিকে সব ধরনের স্থাপনার নকশা করার দক্ষতা অর্জন করতে হয়। সেটা হতে পারে বাড়ি, নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত কোনো বিশাল জায়গা, হাসপাতাল, ব্যাংক, জাদুঘর, বিমানবন্দর, গির্জা কিংবা মসজিদ। সে জন্যই স্থাপত্য শিক্ষায় সব ধরনের শিক্ষাই দরকার হয়। এই বিষয় মূলত শিক্ষার্থীদের যেকোনো বিষয় নিজ উদ্যোগে শিখতে উদ্বুদ্ধ করে। স্থাপত্য হচ্ছে শিল্প বা কলা আর প্রকৌশলের একটি সংমিশ্রণ। এটি শিল্প, কেননা একটা বাড়িতে যারা থাকবে, তাদের অনুভূতি আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়েই তৈরি হয় বাড়ির পরিকল্পনা। একই সঙ্গে এটা প্রকৌশলও, কেননা বাড়িটির গঠন কাঠামো নিয়েও থাকতে হয় নিখুঁত বিশ্লেষণ।

এর সঙ্গে পুরকৌশল ও অন্যান্য প্রকৌশলের বিষয়গুলোও সংযুক্ত থাকে। সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাশাপাশি মানুষের মনটাকেও বুঝতে হয়। নিতে হয় নৃবিদ্যা, মনোবিদ্যা, দর্শন, নন্দনতত্ত্বের পাঠ। আবার প্রায়োগিক বিজ্ঞান–সম্পর্কিত কিছু বিষয়ও আছে। অর্থনীতি, ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক ডিজাইন, ভাস্কর্য নির্মাণ, সাহিত্য, এমনকি সংগীতের শিক্ষাও স্থাপত্যে গুরুত্বপূর্ণ। স্থাপত্য শিক্ষার সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এতে সবকিছুই হাতে–কলমে শিখতে হয়। স্টুডিও বা ল্যাবে বসে তৈরি করতে হয় নিজের কল্পনার প্রকল্পটি।

ভবিষ্যৎ কী

যদিও পেশাদার স্থপতি তৈরি করাই প্রাথমিক লক্ষ্য, কিন্তু ব্যতিক্রম উদাহরণ আছে অনেক। অনেকেই গ্রাফিক ডিজাইন, অন্দরসজ্জা, দ্রব্য বা পণ্যের নকশা কিংবা আরও বড় পরিসরে ভাবলে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনার মতো কাজকেও অনেকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক ব্যবসায়িক সুযোগ আছে, যেমন রিয়েল এস্টেট বা আসবাবের ব্যবসা। অনেক স্থপতিই গণমাধ্যম বা বুটিক শিল্পে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। আমাদের দেশে কিংবা সারা বিশ্বেই বহু আলোকচিত্রী, চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক বা অভিনয়শিল্পী স্থাপত্যে পড়ালেখা করেছেন। কারণ, স্থাপত্যে অনেক তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক বিষয় শেখানো হয়, যা একজন শিক্ষার্থীকে তুরীয় চিন্তা (ক্রিটিক্যাল থিংকিং) করতে শেখায়।

ক্যারিয়ার কোথায়

ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার অর্থাৎ স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক শেষে দুটি রাস্তা সরাসরিই খোলা থাকে

১. স্থাপত্য বিষয়ে শিক্ষকতা করা।

২. পেশাগতভাবে স্থপতি হিসেবে চর্চা করা শুরু করে দেওয়া।

শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গাতেই সুযোগ আছে। যেহেতু এখন বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই স্থাপত্য বিভাগ চালু হয়েছে আর সেখানে শিক্ষকের প্রয়োজন, তাই শিক্ষকতার সুযোগও অনেক। তবে এ ক্ষেত্রে একটা পূর্বশর্ত হচ্ছে স্নাতক পর্যায়ের ফলাফল যথেষ্ট ভালো হতে হবে। আর যাঁরা স্থাপত্য চর্চার দিকে যেতে চায়, তাঁদের জন্যেও সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ আছে। সরকারি পর্যায়ে, সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর বিভাগে স্থপতিরা মূলত সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে থাকে, যা স্থপতিদের জন্য বেশ বড় কাজের খাত। সেখানে সরকারি–বেসরকারি সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য গ্র্যাজুয়েটরাই চাকরি করছেন।

এ ছাড়া সরকারের আরও কিছু সংস্থা আছে, যেমন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), এডিএ, সিডিএ, আরডিএ, একইভাবে সিটি করপোরেশন, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এসব জায়গায় স্থপতিদের প্রয়োজন ও সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে বড় একটা সম্ভাবনার জায়গা হলো পরবর্তী পর্যায়ের পড়াশোনা। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ার পর এই মৌলিক শিক্ষা আরও অনেক দরজা খুলে দেয়। এ ছাড়া ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, গৃহসজ্জার (ইন্টেরিয়র ডিজাইন) মতো বিষয়ে কেউ নিজেকে বিশেষায়িত করতে পারেন। বিশ্বজুড়ে অনেক স্থপতিই মঞ্চসজ্জা, আর্ট ডিরেকশনের কাজ করেন। তবে বাংলাদেশে এখনো এই খাতগুলো পেশা হিসেবে সংগঠিত হয়নি।