যোগাযোগের যুগে

>সময় এখন নেটওয়ার্কিংয়ের, মানে যোগাযোগ বাড়ানোর। যত বেশি পেশাজীবীর সঙ্গে আপনার পরিচয় থাকবে, ততই এগিয়ে থাকবেন। কেন, কীভাবে করবেন নেটওয়ার্কিং?

আন্তর্জাতিক কোনো সম্মেলন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিযোগিতা, শিক্ষাসফর, সভা, সেমিনার, কর্মশালা, এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানও আপনার জন্য একটা সুযোগ হতে পারে। ভাবছেন সম্মেলন, প্রতিযোগিতার সঙ্গে হঠাৎ বিয়ের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গ এল কেন? কারণ অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়া মানেই হলো নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে শেরিল স্যান্ডবার্গের পরিচয় হয়েছিল একটা ক্রিসমাস পার্টিতে গিয়ে। একসঙ্গে কথা বলতে বলতেই তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, দুজনের ভাবনার জগতে অনেক মিল। আজ দেখুন। ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন শেরিল। এভাবে বিভিন্ন দক্ষতার, বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, আর এই যোগাযোগ বজায় রাখাই হলো নেটওয়ার্কিং।

কেন করব নেটওয়ার্কিং?

প্রথমত, নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে বাস্তবিক দুনিয়ায় কী চলছে, সে সম্পর্কে আপনি একটা ধারণা পাবেন। বিভিন্ন শিল্প সম্পর্কে আপনার জানার সুযোগ হবে। কোন খাতে কাজের সুযোগ কেমন, কোথায় কেমন আয় হয়, কোন ক্ষেত্রে কেমন কাজের চাপ, কী যোগ্যতা লাগে, আলাপ-আলোচনায় সেসব উঠে আসবে। ফলে, কোন ক্ষেত্রটা আপনার সঙ্গে মানানসই, সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন, পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে যখন জানার পরিধিটা বড় হবে, আপনি আত্মবিশ্বাস পাবেন।

নেটওয়ার্কিংয়ের কারণেই হয়তো ইন্টার্নশিপ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে সুবিধা হবে। আপনি যে–ই চাকরি পেতে আগ্রহী, সেই চাকরির সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখলে হয়তোবা দেখা যাবে তাঁরাই ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারছেন। আপনি যদি আগে থেকেই জানিয়ে রাখেন, যে আপনি একটা কাজ খুঁজছেন, সুযোগ তৈরি হলে তাঁরা আপনাকে জানাতে পারবেন। অপরিচিত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্য থেকে পরিচিত হিসেবে আপনি একটু এগিয়ে থাকবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনগুলো নেটওয়ার্কিংয়ের বড় সুযোগ। ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ফেয়ারের। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনগুলো নেটওয়ার্কিংয়ের বড় সুযোগ। ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ফেয়ারের। ছবি: সংগৃহীত

শুধু তা–ই নয়। নেটওয়ার্কিংয়ের কারণে চাকরি পরিবর্তন বা এক চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে যুক্ত হওয়াও আপনার জন্য সহজ হবে। আপনি অন্য প্রতিষ্ঠানের পরিচিত কারও সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখে জানতে পারেন সেখানে কী ধরনের কাজ হচ্ছে বা কী সুবিধা প্রতিষ্ঠানটি দিচ্ছে। নিজে কী ধরনের কাজ করছেন, আপনাকে পেলে অপর প্রতিষ্ঠানের কী সুবিধা হবে, এই জিনিসগুলো বোঝাতে পারলে অনেক সময় ইন্টারভিউ ছাড়াও আপনার চাকরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আবার ধরুন, আপনি কোনো চাকরি বা ব্যবসায় যুক্ত আছেন। একটি প্রতিষ্ঠানের সাধারণত আরও নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক যুক্ততা থাকে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার ফলে অনেক কাজ আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

মনে রাখা জরুরি

সবার সঙ্গেই যে আপনাকে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে বা বজায় রাখতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। আপনি পরিচিত হলেন, তাঁর কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলেন। যদি কাজের এই ক্ষেত্রটি আপনার পছন্দ হয়, তবেই যোগাযোগ বজায় রাখলেন। তবে হ্যাঁ, কখনো কর্মপরিধি সম্পর্কে জানতে চেয়ে সরাসরি চাকরি না চাওয়াই ভালো। বরং আপনি কী ধরনের কাজ করতে পছন্দ করেন, কী কী দক্ষতা আপনার আছে, এর আগে কোনো পেশাগত কাজের অভিজ্ঞতা আছে কি না—এ ধরনের আলোচনা করে নির্দিষ্ট মানুষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যেতে পারে, তাঁদের কাজের প্রতি যে আপনার আগ্রহ আছে, সেটা জানানো যেতে পারে।

এমন অনেকে আছেন, যাঁরা একটু চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। সহজে কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না, মিশতে পারেন না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এতে করে ক্ষতিটা আপনার নিজেরই হচ্ছে। নেটওয়ার্কিং করতে হবে আপনার পেশাগত চাহিদার কথা মাথায় রেখে। সাহস করে কথা বলতে হবে। হয়তো খুব অল্প সময়ের জন্য কোনো বড় ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো। আপনি এই সময়টুকু কাজে লাগিয়েই যদি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন, নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনার কথা তাঁর মনে থাকবে।