ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত, গ্রেপ্তার ২

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য, মেধাবী, সৃজনশীল ও মানবিক নেতৃত্ব উপহার দিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বদ্ধপরিকর।
এদিকে গত সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও কোতোয়ালি থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান মামলা এবং গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মশিউর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় গত সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালিদ শেখ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামের কর্মী তরিকুল ইসলাম রিমন ওরফে ছোট তরিকুল, সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলের কর্মী কামরুল ইসলাম, নতুন পদপ্রত্যাশী পক্ষের নেতা স্থগিত কমিটির সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, আশরাফুল ইসলাম টিটনসহ ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে মামলাটি করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম আল আহমেদ এবং রসায়ন বিভাগের আবু সায়েমকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। পরে গত সোমবার সংঘর্ষের ঘটনায় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি ও ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট একই স্থানে মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছাত্রলীগের কর্মীদের সরিয়ে দেন।
প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ বা অন্য যে সংগঠনেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ মামলা করেছে। আমরাও ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছি।’

এ বিষয়ে উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসের সাংবাদিকেরা তাঁদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বুধবার প্রক্টরের দপ্তর এর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের মানববন্ধন
সংঘর্ষ চলাকালে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি ও ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ক্যাম্পাসে বারবার ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংবাদিকেরা নির্মম হামলার শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা। সেখানে জবি প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা এবং অবহেলার কারণেও ক্যাম্পাসে কিছু উগ্র শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়ে যায়। এ সময় কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারাও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকেরা কালো ব্যাজ ধারণ করে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেন। মিছিল শেষে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে উপাচার্য বরাবর একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।

অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের বিবৃতি
ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়ার জন্য প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব ও ভয়মুক্ত ক্যাম্পাস দাবি করেছে।