গবেষণা ক্যাম্পাস হলে বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণতা পাবে

মতিয়ার রহমান হাওলাদার, উপাচার্য
মতিয়ার রহমান হাওলাদার, উপাচার্য
একসময় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বলতে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে বোঝাত। সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল সেখানেই। সেই দৃষ্টি ফিরছে সিলেটে। ১৯৯৫ সালে সিলেট ভেটেরিনারি কলেজ একটি অনুষদ নিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ২০০৬ সালে সিলেট ভেটেরিনারি কলেজ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বয়সে নবীন হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গবেষণা কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। একসময় শিম শুধু শীতকালে উৎপাদিত হতো। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণা করে শিমের সারা বছর উৎপাদন উপযোগী জাত উদ্ভাবন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তি। এর অধীনে নিয়মিত শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রমের তথ্য আদান-প্রদান করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে সাতটি অনুষদের অধীনে এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। মুখোমুখি: মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার, উপাচার্য

প্রথম আলো: কোন প্রেক্ষাপটে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে?

উপাচার্য: ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিলেট অন্য অঞ্চলের থেকে আলাদা। এখানে হাওর-বাঁওড়, উঁচু-নিচু টিলাকে ব্যবহার করে কৃষিবিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণাসহ কৃষির বিভিন্ন শাখা, যেমন দুধ, ডিম, মাংস, মাছসহ কৃষিপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়া এবং গবেষণার উদ্দেশ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রথম আলো: শিক্ষার মানোন্নয়নে ও গবেষণায় আপনাদের কী কী উদ্যোগ আছে?
উপাচার্য: সিলেটের হাওর-বাঁওড়, উঁচু-নিচু টিলাকে ব্যবহার করে উপযুক্ত কৃষিপণ্য উৎপাদনে যেমন চা এবং লেবুজাতীয় ফসলসহ বিভিন্ন শাখায় গবেষণা চলছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া গবেষণা বরাদ্দ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (এসএইউআরইএস) মাধ্যমে গবেষণা প্রকল্পগুলো তদারকি করা হয়। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কৃষকের কাছে উন্নত জাত উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে। শিম মূলত শীতকালে হলেও এখানে গ্রীষ্মকালসহ সারা বছর উৎপাদন করা যাবে, এমন জাতের শিম গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা সরকারিভাবে স্বীকৃত। আমরা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণা জোরদার, বৈশ্বিক স্নাতক তৈরি, চাকরি ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
প্রথম আলো: সিলেট অঞ্চলে অনাবাদি জমি প্রচুর। এসব জমির অধিকাংশ মালিকই প্রবাসী। অনাবাদি এসব জমি আবাদি করার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠান কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি?
উপাচার্য: এটা তো শুধু আমার প্রতিষ্ঠানের দায় নয়, সমগ্র সিলেটবাসীর। প্রচুর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। কিন্তু এগুলো আবাদি করতে গেলে প্রবাসী মালিকানার যেগুলো, সেখানে অন্য রকম চিন্তা কাজ করে। প্রবাসীরা তাঁদের জমি দখল ঠেকাতে অনাবাদি ফেলে রাখছেন। আবার কোথাও প্রাকৃতিক কারণে কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাবাদি থাকছে জমি। এখানকার মাটির উপযোগী ফসল এসব জমিতে করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর আগে জনপ্রতিনিধিরা এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আশ্বস্ত করতে পদক্ষেপ নিতে পারেন। এই মুহূর্তে অনাবাদি জমির সঠিক পরিমাণ আমার মনে পড়ছে না, তবে তা সারা দেশের তুলনায় অবশ্যই বেশি।
প্রথম আলো: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা কেন?
উপাচার্য: হরতাল, অবরোধসহ যেকোনো খারাপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর প্রভাব পড়ে না। এখানে হরতাল-অবরোধেও ক্লাস-পরীক্ষা হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ সেশনজটমুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণতা দিতে এখনো কী কী সংকট আছে?
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণতা দিতে মাঠ গবেষণার জন্য জমির সংকট আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২০ একর জমি গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও ২০০ একর জমি নিয়ে গবেষণা ক্যাম্পাসের জন্য একটি প্রস্তাব সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া আছে। প্রস্তাবটি পাস হলে বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণতা পাবে।
প্রথম আলো: ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানকে কী অবস্থানে দেখার পরিকল্পনা আপনার?
উপাচার্য: আমাদের উপাচার্যদের মেয়াদ থাকে চার বছর। এই সময়ের মধ্যে সব পরিকল্পনা একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা কঠিন। আমরা ইতিমধ্যে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এসব পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেট অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি গর্বের প্রতিষ্ঠান হবে—এটি জোর দিয়েই বলতে পারি।