প্রাত্যহিক জীবনে জিআরই-টোয়েফলের প্রস্তুতি

জিআরই বলতে বোঝায় গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন এবং টোয়েফল হলো টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ। দুটোই ইংরেজি ভাষা–দক্ষতার পরীক্ষা। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য জিআরই বা টোয়েফল পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার গণ্ডি শেষ করে এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য আমরা কঠিন প্রস্তুতি শুরু করি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকে টুকটাক প্রস্তুতি শুরু করলে পরে একটা ভালো নম্বর পাওয়া সহজ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই কীভাবে জিআরই-টোয়েফলের প্রস্তুতি নেওয়া যায়, বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক, আমেরিকান সেন্টার-ঢাকা ও ইএমকে সেন্টারের সাবেক জিআরই ও টোয়েফল প্রশিক্ষক সাইফুল রনি।

প্রস্তুতির আগের কথা

অন্য যেকোনো পরীক্ষার মতো একটি কথা জিআরই বা টোয়েফলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য: ভালো প্রস্তুতি নিলে আপনি ভালো নম্বর পাবেন। কিন্তু আলস্য বা প্রস্তুতির সময় হেলাফেলা করার জন্য আমাদের মধ্যে পরীক্ষাভীতি তৈরি হয়। এ ছাড়া যেহেতু ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ভীতি কাজ করে। ইংরেজিভীতি কিন্তু খুব সহজে দূর করা যায়। জিআরই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যে তিনটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো—‘কোয়ান্টিটেটিভ’ অংশের জন্য স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের গণিত সম্পর্কে ধারণা রাখা। ‘ভারবাল’ অংশের জন্য ইংরেজি শব্দ ও প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা রাখা। এ ছাড়া ইংরেজিতে লেখার অভ্যাস করা খুব জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে যা করতে পারেন

 আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন, হোক সেটা প্রকৌশল, সমাজবিজ্ঞান, বিবিএ কিংবা অন্য কিছু—আপনার বিষয়ভিত্তিক পড়ার ক্ষেত্রে ইংরেজিকে গুরুত্ব দিতে পারেন। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও বিষয়সংশ্লিষ্ট জার্নাল পড়া, লেখা, গবেষণার প্রতি আগ্রহ, ইন্টারনেট ঘেঁটে শেখার চেষ্টা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। এক দিক দিয়ে একাডেমিক পড়ালেখায় সুবিধা হবে, তেমনি জিআরই বা টোয়েফলের প্রস্তুতিও হবে।

 নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ইংরেজি নিবন্ধ, পত্রিকা, সম্পাদকীয় পড়তে পারেন। প্রতিদিন দু–তিনটি নিবন্ধ পড়ার মাধ্যমে এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। শুধু জিআরই বা টোয়েফল পরীক্ষার জন্য নয়, ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা অর্জনের জন্য পড়ার অভ্যাস দারুণ কার্যকর। রিডার্স ডাইজেস্ট, ফরেন পলিসি, ইকোনমিস্টের মতো সাময়িকীগুলো পড়ার চর্চা ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ায়। যে বিষয়েই পড়ুন না কেন, জিআরই-টোয়েফল পরীক্ষা না দিলেও ইংরেজিতে দক্ষতা ভবিষ্যতের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

 সাধারণ গণিতের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে ক্লাস প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্ট, গবেষণা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গণিতে যাঁদের ভয় আছে, তাঁরা গণিত বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে মনোযোগ দিতে পারেন। জিআরই পরীক্ষায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের সাধারণ গণিতের ওপর ভিত্তি করেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে গণিতের বিভিন্ন প্রশ্ন বোঝার দক্ষতা আয়ত্তের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাঁরা বিজ্ঞান বা প্রকৌশলের বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সময় গণিত চর্চার সুযোগ পান না। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যেসব বিষয়ে প্রশ্ন আসে, তা সমাধানের মাধ্যমে চর্চা চালিয়ে নেওয়া যায়।

 ইংরেজি সিনেমা দেখা ইংরেজি চর্চার একটা ভালো উপায়। এতে ইংরেজি ভাষার শব্দ ও শব্দের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগ সম্পর্কে জানার সুযোগ আছে। ইংরেজি সিনেমা দেখার অভ্যাস শ্রবণদক্ষতা বাড়াতে বেশ সহায়ক। শুধু যে সিনেমাই দেখতে হবে তা নয়, আপনি যদি ক্রিকেট ভালোবাসেন, তাহলে ধারাভাষ্যকারদের কথা মন দিয়ে শুনুন। ভিনদেশি বিভিন্ন ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখুন। গান ভালোবাসলে আপনি ইংরেজি গান শুনুন। আপনার দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজির একটা চর্চা থাকলেই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

প্রতিদিন ইংরেজিতে লেখালেখির অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এতে জিআরই-টোয়েফল বা আইইএলটিএস পরীক্ষার লিখিত অংশের জন্য নিজেকে তৈরি করা যায়।

 ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে প্রস্তুতির নানা ভিডিও ও তথ্য পাওয়া যায়। অবসর সময়ে ফেসবুকের চেনা হোমপেজে দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রল না করে চাইলে এসব তথ্যপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলোও ঘুরে দেখতে পারেন।

 বহুমাত্রিক বিভিন্ন বিষয় যেমন বিশ্বায়ন, সামাজিক সমস্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও দর্শনবিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধ ও ইউটিউবে এ–সংক্রান্ত তথ্যচিত্র দেখার অভ্যাস করা যেতে পারে। এতে বিভিন্ন বিষয়ে জানার সুযোগ যেমন বাড়বে, তেমনি দ্রুত চিন্তা করার দক্ষতাও বাড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে আপনি পড়ছেন, তার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিয়েও এসব চর্চা চালিয়ে নেওয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজি বলার অভ্যাস, গণিত চর্চা ভবিষ্যতের জিআরই পরীক্ষার জন্য সহায়ক। জিআরই-টোয়েফল পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রথম থেকেই চাপ নেওয়ার দরকার নেই। ক্লাসের ফাঁকে এক কাপ চা কিংবা বাড়ি ফিরতে ফিরতে হেডফোনে গান শোনা যদি 
আপনার অভ্যাস হয়, তাহলে ইংরেজি চর্চাও এ রকম একটি অভ্যাস হয়ে উঠতে পারে। সব সময় যে পরীক্ষার জন্যই পড়তে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই।