কীর্তনখোলার পারে একটুকরো ভালোবাসা

রাতের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি তুলেছেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র আহাদ শরীফ।
রাতের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি তুলেছেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র আহাদ শরীফ।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের কথা। বরিশালে যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসি, আমার কেন্দ্র ছিল সরকারি মহিলা কলেজে। এর আগে যতগুলো ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসই দেখার সুযোগ হয়েছিল। তাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও এক চক্কর দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল খুব। কিন্তু আফসোস, তাড়াহুড়ার কারণে আর হয়ে ওঠেনি। তখন একটু মন খারাপ হয়েছিল।

কে জানত, এই ক্যাম্পাস আমার শুধু দেখাই হবে না, এখানেই আমার জীবনে পরের কয়েকটা বছর কাটবে! প্রথমবার যখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি, আমার মুগ্ধতা শুরু হয়েছিল কীর্তনখোলা নদীর ওপর অবস্থিত দপদপিয়া ব্রিজ থেকে। ব্রিজ পার হতেই চোখের সামনে যেন দুর্গের মতো জেগে ওঠে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভবন। ব্রিজটা যেন অভ্যর্থনা জানানোর জন্যই তৈরি হয়েছে!

কীর্তনখোলার পারে আমাদের এই ক্যাম্পাস। এখান থেকে সুবিশাল আকাশটা সকাল, বিকেল, সন্ধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখায়। পাশেই বরিশাল-ভোলা সড়ক (ভোলার রোড নামে পরিচিত), যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তিন রঙের বাস, যার মধ্যে লাল রঙের দোতলা বাসগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য। এই বাসগুলোর নাম লতা, সন্ধ্যা, বিষখালী ইত্যাদি; যেগুলো আসলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন নদ–নদীর নাম থেকে নেওয়া। এখানে আমরা শিক্ষকদের সম্মান করি, বড়-ছোটদের সম্পর্কও অত্যন্ত বন্ধুসুলভ ও সহযোগিতাপূর্ণ।

সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই এখানে পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে। বিজ্ঞানের প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা একাধিক গবেষণাগার রয়েছে। এখান থেকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন।

বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর কোনো তুলনা হয় না। সারা দিন ক্লাস শেষে সবাই একসঙ্গে ক্যাফেটেরিয়ায় খাওয়া বা লাইব্রেরিতে ছোটা আবার কখনো বা প্রীতিলতা চত্বরে বসে শুধু আড্ডা দিয়েই সময় কাটিয়ে দেওয়া—এটাই এখানে জীবন। সারা দিনের অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস, মিডটার্ম বা ল্যাবওয়ার্কের পর সবাই মিলে সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে বসলে কীর্তনখোলার মিষ্টি ঠান্ডা হাওয়া আর ক্যাম্পাসের কোনো এক চত্বর থেকে ভেসে আসা মৃদু গিটারের সুরে যে কারও ক্লান্তি দূর হতে বাধ্য। আর এসব মোহময় সৌন্দর্যের কারণেই হয়তো এত অল্প দিনেই এই ক্যাম্পাসের মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি।

মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়