ঐতিহ্য, স্বপ্ন, গৌরব - সব মিশেছে যেখানে

নানা রঙে মুখর থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবিটি তুলেছেন ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. তাহসীনুল হক
নানা রঙে মুখর থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবিটি তুলেছেন ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. তাহসীনুল হক

স্বপ্নপূরণ হওয়াটা কী জিনিস, ছোটবেলায় সেটা বুঝতাম না। বুঝেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর। আমার মতো হাজারো ছেলেমেয়ে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠে পড়ালেখার স্বপ্ন দেখে বড় হয়। ছোটবেলায় ভাইয়ার হাত ধরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরেছি। কিন্তু যত বড় হয়েছি, ততই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেছি। তোমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন নিয়ে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছ, একদিন আমিও তোমাদের মতো স্বপ্নিল চোখে অপেক্ষায় দিন গুনেছি।

দেখতে দেখতে তিন বছর হতে চলল এই স্বপ্নের ক্যাম্পাস। দীর্ঘ সময়ে অর্জনের খাতাটা বেশ ভারী হয়েছে। এখানে পেয়েছি অসম্ভব ভালো কিছু বন্ধু, যাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে অনেকটা সময় পার করে ফেলেছি। আড্ডাগুলো শুধু এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো নয়। এগুলোর মধ্যে ছিল অনেক জীবনমুখী আলোচনা, অনেক সমস্যার সমাধান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা দেওয়ার মতো জায়গার অভাব নেই। সবুজ চত্বরের ঘাসে, মল চত্বরের বিস্তীর্ণ এলাকা, এমবিএ বিল্ডিংয়ের মেঝে বা গরম চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে তুমুল আড্ডায় মেতে থাকা টিএসসি—সবই তোমাকে স্বাগত জানাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোরার মতো অনেক জায়গা আছে, যেগুলো দেখতে দেখতে পুরো প্রথম বর্ষ কাটিয়ে দিয়েছিলাম। ঐতিহাসিক কার্জন হল, জগন্নাথ হল, শহীদুল্লাহ হল এবং জহরুল হক হলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জাতীয় কবির সমাধি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় শহীদ মিনার, অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, তিন নেতার মাজারসহ অসংখ্য নিদর্শনে ভরপুর এই বিশ্ববিদ্যালয়। এটি এমন একটি স্থান, যেখানে খুব নিম্ন শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চ শ্রেণি—সব ধরনের ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবাই সমান। সব শ্রেণির মানুষ সবার সঙ্গে নির্দ্বিধায় মিশে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগের নিজস্ব রিসার্চ সেন্টার আছে, যা ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করে। সঙ্গে আছে মানসম্মত শিক্ষক, যাঁদের নিরলস পরিশ্রম শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত নতুন জিনিস শেখার সুযোগ দিচ্ছে। ভাবছ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ পাবে কোথায়? সাংস্কৃতিক চর্চা এবং ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়নের জন্য এখানে অনেকগুলো সংগঠন আছে। তোমাকে শুধু নিজের পছন্দের জায়গাটা খুঁজে নিতে হবে।

খুব গর্ব হয়, যখন দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার পায়। বিশেষ দিনগুলোতে আমাদের ক্যাম্পাস হয়ে যায় উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। একটা কথা বারবার মনে হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে হয়তো জীবনের একটি সোনালি অধ্যায় মিস করে যেতাম।

যাদের স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, তাদের এখন থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মেধাবীরা না, কঠোর পরিশ্রমীরা সুযোগ পায়। তাই শুধু রোবটের মতো মুখস্থ করে চান্স পাওয়া সম্ভব না, বুঝে এবং কৌশল অনুসরণ করে পড়তে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এমন একটি জায়গা, যেখানে কখনো তুমি ‘একা’ হয়ে যাবে না। চিরসবুজ আর অসংখ্য মানুষের পদচারণে প্রাণোচ্ছল এই ক্যাম্পাস। প্রতিদিন যখন ক্যাম্পাসে যাই, তখন নতুন করে উপভোগ করি এই প্রিয় ক্যাম্পাসকে। অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাই উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য এখনো ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। আমি গর্ববোধ করি, এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের একজন ছাত্র হতে পেরে। 

ফিন্যান্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়