সত্যিই অলরাউন্ডার

রাফাহ্ নানজীবা
রাফাহ্ নানজীবা

বয়স তখন তিন বা সাড়ে তিন। রাফাহ্ নানজীবা তখনো স্কুলে ভর্তি হননি। কিন্তু গুটিগুটি পায়ে ঠিকই নাচের হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছিল। কাহারবা বা দাদরা তালে পা মিলিয়ে নাচের শুরু। বছর খানেকের মাথায় আবৃত্তি ও ছবি আঁকাতেও ভর্তি করিয়ে দিলেন মা। মায়ের উৎসাহেই শিল্প, সাহিত্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা। চট্টগ্রামের শিশু একাডেমিতে মা সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। সেই থেকে এই অঙ্গনে।

রাফাহ্ নানজীবার সঙ্গে দেখা করতে হলে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন তিনি। কত যে পুরস্কার পেয়েছেন আজ পর্যন্ত! একটু পেছন থেকেই শুরু করি।

২০০৯ সালে, বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু–কিশোর প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে লোকনৃত্যে একমাত্র পুরস্কার পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলেন। অভিনয় বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগকে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। সেই সুবাদে জাপান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয় সরকারি অনুদানে। সে বছরেই রাফাহ্ নানজীবা মূকাভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে। যা অনুষ্ঠিত হয় ভারতের দিল্লিতে। ২০১০ সালে জাতীয় শিশু–কিশোর প্রতিযোগিতায় ভরতনাট্যম নৃত্যে স্বর্ণপদক লাভ করেন। সে বছরই এনটিভি আয়োজিত প্রতিভা অন্বেষণের প্রতিযোগিতা মার্কস অলরাউন্ডারে অংশ নিয়ে প্রথম রানার আপ হয়েছিলেন তিনি।

যদি ভাবেন, এতেই রাফাহ্ নানজীবার পুরস্কারের শোকেস ভরে গেছে, ভুল করবেন। আরও অর্জনের কথা বললেন তিনি, ‘২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে আবৃত্তিতে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেছি। এর আগের বছর জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম। গত বছর ভারতের ত্রিপুরা নৃত্য উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলাম। আর হ্যাঁ, তৌকীর আহমেদ পরিচালিত হালদা চলচ্চিত্রের একটা ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলাম আমি।’

এত কিছু করেও কিন্তু পড়াশোনায় কখনোই পিছিয়ে পড়েননি। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়েই পা রেখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষ থেকেই যেকোনো আয়োজনে তিনি সবচেয়ে পরিচিত মুখ।

পড়াশোনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে একই সঙ্গে সক্রিয় থাকায় শিক্ষকদের প্রিয় হতে সময় লাগেনি একদমই। জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই আফসোস করতে চান না রাফাহ্ নানজীবা। পড়ালেখা, কাজ—সবকিছুই স্বতঃস্ফূর্তভাবে, আনন্দের সঙ্গে করতে চান। জীবনের কোনো কিছু নিয়েই যিনি চাপ নিতে চান না, সেই রাফাহ্ নানজীবার প্রিয় খাবার অবশ্য ‘চিকেন চাপ’!