নিজের সিট ছেড়ে গণরুমে উঠলেন ডাকসু নেতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনসংকটের ফলাফল গণরুমব্যবস্থা। এক কক্ষে গাদাগাদি করে থাকেন অনেক শিক্ষার্থী। গত মার্চে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হলেও এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আশ্বাস দিয়েও কোনো সমাধান করতে না পারার আক্ষেপ থেকে এবার গণরুমে গিয়ে উঠেছেন ডাকসুর এক সদস্য। গণরুম সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত গণরুমে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে বৈধ আসন পান না। হলে থাকতে হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা গণরুমগুলোতে উঠতে হয়, বিনিময়ে যেতে হয় ওই সংগঠনের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। ডাকসু নির্বাচনের সময় বিজয়ী ও বিজিত প্রায় সব প্যানেলের ইশতেহারে গণরুমব্যবস্থার সমাধানের আশ্বাস থাকলেও ডাকসু কার্যকর হওয়ার অর্ধবছর পরও ওই ব্যবস্থা বহাল রয়েছে।
গণরুম সমস্যার সমাধান চেয়ে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে গতকাল রোববার রাতে গণরুমে উঠেছেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান। তিনি ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুর সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্যও তিনি। নির্বাচনে ছাত্রলীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথম দফাটিই ছিল আবাসনসংকট নিয়ে। বলা হয়েছিল, ডাকসুতে ছাত্রলীগ জিতলে বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের রূপরেখা প্রণয়ন করবে আর আপৎকালীন সমাধান হিসেবে দ্বিতল বা ত্রিতল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য একক আসন নিশ্চিত করবে।
ডাকসু ও হল সংসদ ২৩ মার্চ থেকে কার্যকর হয়। সেই হিসেবে প্রায় ছয় মাস পার করেছে ডাকসু। ডাকসুর ২৫ পদের ২৩টিতেই জিতেছে ছাত্রলীগ, হল সংসদগুলোতেও ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবে গত ছয় মাসে আবাসনসংকটের সমাধানে ছাত্রলীগ বা ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি৷ আর কোনো উদ্যোগ না দেখার এই আক্ষেপ থেকে কবি জসীমউদ্দীন হলের নিজের আবাসিক কক্ষ (৩২০ নম্বর) ছেড়ে গণরুমে (২০৮ নম্বর) উঠেছেন তানভীর। গণরুমটিতে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকেন।
তানভীর হাসান সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, গণরুম সমস্যার সমাধানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তিনি গণরুমেই থাকবেন৷ বলেন, ‘আমি নিজেও গণরুম সমস্যা সমাধানের কথা বলে ভোট চেয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এত দিনেও সমাধানের কোনো পথ তৈরি করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ সমস্যার সমাধানের কোনো চেষ্টা করেনি। আমি বিশ্বাস করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীই মেধাবী। সুযোগ পেলে তাঁরা মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবেন। গণরুমই মেধার বিকাশের পথে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’
ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজের কক্ষে প্রতিদিন গণরুমের একজন শিক্ষার্থীকে রাখছেন তানভীর। পালাক্রমে অনেক শিক্ষার্থীই তাঁর কক্ষে থেকেছেন। নিজে গণরুমে গিয়ে এবার নিজের কক্ষে গণরুমের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।
তানভীরের এ উদ্যোগের বিষয়ে জানানো হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র আবাসনসংকট রয়েছে। এর সমাধানের জন্য নতুন হল নির্মাণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি হল প্রশাসন ও হল সংসদগুলো দেখবে।