ফোনালাপ নিয়ে রাবির সহ-উপাচার্যের ফের ব্যাখ্যা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের আগে এক চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রীর সঙ্গে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে মোবাইলে কথোপকথনের ফের ব্যাখ্যা দিয়েছেন সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া। এবার তিনি এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে অডিওটি সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর ফোনালাপ একটি স্বার্থান্বেষী মহল আংশিক, খণ্ডিত ও অসৎভাবে প্রকাশ করেছে। যে ঘটনার সূত্র ধরে এই ইস্যু তৈরি হয়েছে, তা হলো আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড ছিল ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর। এর মাত্র নয় দিন আগে ৪ নভেম্বর আইন বিভাগের নিয়োগসংক্রান্ত একটি দুর্নীতির নথি আমার নজরে আসে, যা ইসলামী ব্যাংকে দুই লাখ টাকার একটি লেনদেনের রসিদ। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে আমি অনেকটা সাবলীল ভঙ্গিতে আমার নাম ও পরিচয় দিয়ে হুদার স্ত্রীর কাছ থেকে টাকার উৎসটি জানার চেষ্টা করি।’

চৌধুরী মো. জাকারিয়া আরও বলেন, ‘আমি যে রসিদ পেয়েছিলাম, সেটা ছিল ডিসেন্ট ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হান্নানের নামে। সেখানে মোহাম্মদ হান্নানের ছবি ও স্বাক্ষর রয়েছে। এই মোহাম্মদ হান্নান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি। আমাকে ফাঁসিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর, যখন প্রতিবাদলিপি দিয়েছিলাম, তারপর থেকে ২ অক্টোবর হঠাৎ করে টাকা লেনদেনের সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়াও হয়েছে।’ তবে আইন বিভাগের সভাপতির ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ছবিতে ব্যাংকের সিলছাপ্পর নেই কেন—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি সহ–উপাচার্য।

সংবাদ সম্মেলনে সহ–উপাচার্য আরও বলেন, ‘আরেকটি বিষয় নির্লজ্জভাবে অনেকেই রটানোর চেষ্টা করছে এই ভেবে যে আমার জামাতার নিয়োগের জন্য হুদার (ফোনালাপ করা ছাত্রীর স্বামী) চাকরি হয়নি; যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইন বিভাগের নিয়োগ বোর্ড ছিল ১৩ নভেম্বর ২০১৮, সিন্ডিকেট হয়েছে ১৭ নভেম্বর ২০১৮, যোগদান হয়েছে ১৮ নভেম্বর ২০১৮। আর তাদের বিয়ে হয়েছে ২৪ এপ্রিল ২০১৯। তাহলে কীভাবে আমার জামাতাকে সংশ্লিষ্ট করে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়?’

এ সময় সহ-উপাচার্য সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচন ও সত্য প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘লোকমুখে প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক নিয়োগ–বাণিজ্যসহ আইন বিভাগের নিয়োগ নিয়েও আমি বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগের অর্থ লেনদের বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি আবদুল হান্নান ও নুরুল হুদার একটি কথোপকথনের রেকর্ড ও ডিসেন্ট ট্রেডার্স নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত লেনদেনের তথ্য সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সহ–উপাচার্যের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘সহ–উপাচার্য সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে টাকার লেনদেন আমি করেছি এবং এর জন্য আমি দায়ী। তবে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছিল, এটা সত্য। নুরুল হুদা হঠাৎ একদিন আমার ব্যবসায়িক অফিসে (ডিসেন্ট ট্রেডার্স) যায়। ওই সময় আমার এক জায়গা থেকে টাকা আসার কথা ছিল, কিন্তু না আসায় আমি চিন্তিত ছিলাম। কথার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আমি এ বিষয়ে হুদাকে বলি। তখন ও আমাকে যেকোনোভাবে ব্যবস্থা করে দিতে চায় এবং সৈয়দপুর থেকে ডিপোজিট ক্যাশ করা হয় এই অ্যাকাউন্টে।’

মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘৪ নভেম্বর ২০১৮ আমার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে ১১ নভেম্বর ফেরত হিসেবে চেক জমা দিই এবং ১৩ তারিখে তা জমা হয়।’ ফোনালাপের বিষয়ে অধ্যাপক হান্নান বলেন, ‘যে কল রেকর্ড উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটা ধার করা টাকা ফেরতসংক্রান্ত এবং ওই নিয়োগের এক সপ্তাহ আগেই।’

অধ্যাপক হান্নান দাবি করেন, ‘ডিসেন্ট ট্রেডার্সের লেনদেনসংক্রান্ত যে রসিদ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটাতে ব্যাংকসংবলিত আমার ছবির ওপর সিল-স্বাক্ষর থাকার কথা। অথচ সেটা দেখে মনে হয়, ছবিটা পেস্ট করা।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক কোনোভাবেই এ তথ্য দেওয়ার কথা না। ব্যাংক আমাকে না জানিয়ে কোনো তথ্য দিতেই পারে না। এটা ছবি পেস্ট করা হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, ওই অ্যাকাউন্ট এখনো চালু আছে।