চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা কাগজে-কলমে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এ ছাত্র রাজনীতি চালু থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ছাত্র রাজনীতির ওপর তিন দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু কোনোবারই তা প্রত্যাহার হয়নি। আর এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কাগজে-কলমে। ছাত্রসংগঠনগুলো কখনোই তা আমলেই নেয়নি। এমনকি সবশেষ নিষেধাজ্ঞার কথা ভুলে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। ফলে ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রমে বাধা দূরে থাক, অনুমতিও দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের নভেম্বরে প্রথম নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরপর আরও দুবার নিষেধাজ্ঞা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে এর মধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলো ঠিকই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে নিজেদের মধ্যে। গত ১০ বছরে খুন হয়েছেন আট শিক্ষার্থী। সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল একাধিকবার। এতে ব্যাহত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট ছাত্রশিবিরকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল। ছাত্রলীগ নিয়মিত মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আর ছাত্র ইউনিয়ন সম্প্রতি সম্মেলন করেছে।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এখন ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই। ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রম তো চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কিছু আছে কি না তা তাঁর জানা নেই। তিনি স্বীকার করেন, আবাসিক হলগুলো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

তবে ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গত ছয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক সিরাজউদ্দৌলা ও অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী।

ছাত্রলীগের দাপট

সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়েস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখির কারণে গত দেড় বছরে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। লেখালেখির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে হয়রানি করে ছাত্রলীগ।

>

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে রাজনৈতিক কার্যক্রম।
ছাত্রলীগের দাপটে কোণঠাসা অন্য ছাত্রসংগঠন।

প্রগতিশীল ছাত্র জোট গত ১২ মার্চ পুনরায় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করলে তাতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের নেতারা ক্যাম্পাসে গেলে একাধিকবার হামলা করা হয়।

ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম দাবি করেন, ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দিতে এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি গৌরচাঁদ ঠাকুর।

ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপু বলেন, ছাত্র রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। ফলে আগের কমিটির মতো তাঁরাও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে নতুন কমিটি গঠনের পর ফেসবুকে লেখালেখির জন্য কাউকে মারধর করা হয়নি।

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রম কীভাবে চলছে জানতে চাইলে সাবেক প্রক্টর সিরাজউদ্দৌলা প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ বা জরুরি পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতির নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তখন প্রশাসনের লোকজনও নিষেধাজ্ঞার কথা মনে রাখে না। ফলে এর ফাঁকে ছাত্রসংগঠনগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যায়। তবে তাঁর দাবি, ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ক্ষতি হয় না।

তবে এর সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন সাবেক প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির জন্য কিছুটা হলেও প্রভাব পড়ে। ছাত্রসংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ ও পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মাঝেমধ্যে হলে মারামারি হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান না থাকায় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।