আছে স্নাতকোত্তরের সুযোগ

অফিস শেষে অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরের ক্লাসে অংশ নেন। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে
অফিস শেষে অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরের ক্লাসে অংশ নেন। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

স্নাতক পর্যায়ে পড়া শেষ করেই একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর ব্যস্ততা আর কাজের চাপে ২-৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আর স্নাতকোত্তর করা হয়নি তাঁর। মোস্তাফিজ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ ডিগ্রি নিচ্ছেন। তিনি বলছিলেন, ‘ভেবেছিলাম চাকরিতে যোগ দিয়ে স্নাতকোত্তর শুরু করব। কিন্তু কীভাবে যেন একটা লম্বা বিরতি পড়ে গেল। ভেবে দেখলাম, ক্যারিয়ারের জন্য ডিগ্রিটা দরকার। তাই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। নিয়মিত পড়াশোনার মতোই এখানে যেমন পড়ার চাপ আছে, তেমন নিয়মিত ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর প্রেজেন্টেশনও থাকে।’

মোস্তাফিজের মতোই আরেকজন শিক্ষার্থী অনুপম দেব। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব এডুকেশন প্রোগ্রামে পড়ছেন। তিনি জানান, ‘চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করা একটু কঠিন, কিন্তু তবু সন্ধ্যায় ও ছুটির দিনগুলোতে ক্লাস করছি বলে পড়াশোনা ও চাকরি—দুটো ঠিকমতোই চালিয়ে নিতে পারছি।’ 

সাব্বির বা মোস্তাফিজের মতো তরুণ, স্নাতকের পর যাঁরা নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারেননি, তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছেন। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছুটির দিনে বা সন্ধ্যাকালীন স্নাতকোত্তরের সুযোগ আছে। তবে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা হলো, এখানে খরচ অন্যান্য জায়গার তুলনায় কম। ভর্তির যোগ্যতাও তুলনামূলকভাবে কিছুটা শিথিল।

আছে নানা মাত্রার সুযোগ

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, গণস্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা যায়। এমএ, এমএসএস, এমবিএ, এমপিএইচের মতো বিভিন্ন প্রোগ্রামে এক বছর ও দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তরের সুযোগ আছে। ৫টি স্কুলে পড়ানো হয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুলগুলো হচ্ছে ওপেন স্কুল, স্কুল অব এডুকেশন, স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্স, হিউম্যানিটিজ ও ল্যাঙ্গুয়েজ, স্কুল অব বিজনেস, স্কুল অব অ্যাগ্রিকালচার ও রুরাল ডেভেলপমেন্ট এবং স্কুল অব সায়েন্স ও টেকনোলজি। সারা বছরই নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন কোর্সে সেমিস্টার পদ্ধতিতে ভর্তি করা হয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

সুযোগ আছে এমবিএর

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ও ঢাকা ক্যাম্পাসে এমবিএ পড়ার সুযোগ আছে। সন্ধ্যাকালীন এমবিএ-ও করা যায়। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে এমবিএ করা যায়।

সিইএমবিএ ও এমপিএ

দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাউবিতে কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিইএমবিএ) ও কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিইএমবিএ) পড়ার সুযোগ। বাউবির সঙ্গে কমনওয়েলথ অব লার্নিং, পাকিস্তানের আল্লামা ইকবাল ওপেন বিশ্ববিদ্যালয়, ওপেন ইউনিভার্সিটি অব শ্রীলঙ্কা ও বিভিন্ন কমনওয়েলথ দেশের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত আয়োজনে এই ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।

পড়ার সুযোগ আছে বিজ্ঞানেও

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ, মাস্টার্স অব ডিজঅ্যাবিলিটি ম্যানেজমেন্ট ও রিহ্যাবিলিটেশন, এমএসসি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইন ফার্মাকোলজি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ আছে। কোর্সভেদে দেড় থেকে দুই বছরের প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেন। 

বাউবির স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ডিন সরকার মো. নোমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমাদের কোর্সগুলো সাজানো হয়। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপদ্ধতি যেমন আমরা অনুসরণ করছি, তেমনি আমাদের ডিগ্রি বিশ্বমানেরই। শিক্ষার্থীদের এখান থেকে ডিগ্রি অর্জনের জন্য যেমন নিয়মিত ক্লাস করতে হয়, তেমনি ব্যবহারিক পরীক্ষা, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টও করতে হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের ডিগ্রি নিয়ে দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি শুধু শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে সহায়তা করছে না, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও সহায়তা করছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণা নিবন্ধও প্রকাশের সুযোগ আছে।

পড়ার যোগ্যতা

সিজিপিএ-২.৫ হলেই যেকোনো শিক্ষার্থী বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষা ও ভাইভার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ মিলবে। দেশের প্রায় সব জেলাতেই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেকোনো কোর্সে ভর্তির বিস্তারিত তথ্য bou.edu.bd ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।

কেমন খরচ

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির খরচ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় কম। যেমন: মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ বিষয়ে পড়তে খরচ পড়বে প্রায় ৭৮ হাজার টাকা। সেমিস্টার পদ্ধতিতে ফি দিতে হয় বলে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয় না। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো কোর্স শেষ করতে ৫ বছর পর্যন্ত সময় পান শিক্ষার্থীরা।