এক মঞ্চে ছোট-বড় সবাই

নানা কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখেন এই ক্লাবের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
নানা কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখেন এই ক্লাবের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৪০ সালের ১৬ জুন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এ এইচ কোরেশী সিরাজগঞ্জ শহরের রহমতগঞ্জে আয়েশা কোরেশী নামে একটি কলেজ স্থাপন করেন। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। সময় পেরিয়ে ১৯৭৯ সালে কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়। পরিচিতি পায় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ নামে। এই কলেজের শিক্ষক ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ অনেকেই।

শুধু লেখাপড়ায় নয়; গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থাপনা, খেলাধুলা, বিতর্ক, রচনা প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান, শুদ্ধ বানান, বিজ্ঞানচর্চাসহ নানা ক্ষেত্রে নিজেদের ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। একদল শিক্ষার্থী ভালোবাসেন সাহিত্য, নিজেদের মতো করে চর্চাও করতে চেষ্টা করেন। আরেক দল শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। দুটি দলকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একটি সংগঠন, যার নাম সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্লাব সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ।

উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরাও এই ক্লাবের অংশ। ছোট-বড় সবাইকে এক করেছে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা। শিক্ষার্থীরা সবাই এখানে সাধারণ সদস্য। আর তাঁদের দিকনির্দেশনা দিতে আছেন ১২ জন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। জানা গেল, ক্লাবের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন গান ও আবৃত্তির প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।

নিয়মিতভাবে সপ্তাহের শেষ দিন কলেজ মিলনায়তনে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্কের আয়োজন করা হয়। ক্ষুরধার যুক্তিতর্কে ঘায়েল করার চেষ্টা থাকে প্রতিপক্ষকে। আবার প্রায়ই ক্লাবের সদস্যরা মুখর হয়ে ওঠেন সাহিত্য আড্ডায়। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমন রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, পয়লা ফাল্গুন, পয়লা বৈশাখ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, শোক দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্লাবের সদস্য ও শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে বই ও সনদ দেওয়া হয়।

কথা হলো বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া জান্নাতের সঙ্গে। সে কবিতা, গান ও বিতর্কচর্চা করে। ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আছে দুই বছর ধরে। ক্লাবের বড় ভাইয়া ও আপুদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা দেখে সে অনুপ্রাণিত হয়েছে। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্লাবের সদস্য হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত তাসমিয়া। তবে একই সঙ্গে কিছুটা আক্ষেপের কথাও বলল সে, ‘যদি আরেকটু বড় জায়গা পেতাম, আরও বেশি বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো, তাহলে আমরা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পেতাম। আরও বেশি চর্চা করতে পারতাম।’

সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্লাবের আহ্বায়ক ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদ আবু বকর। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন অধ্যক্ষ এ টি এম সোহেল। ক্লাবটির সদস্যসচিব বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, তিন-চার বছর আগে ক্লাবের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অংশে এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে অন্য অংশে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের চর্চা ও প্রশিক্ষণ অনিয়মিত হলেও যেকোনো অনুষ্ঠানে ও আয়োজনে একাদশ থেকে স্নাতকোত্তরের ছেলেমেয়েরা এক দল হয়ে অংশগ্রহণ করেন।

মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে ক্লাবের ছত্রচ্ছায়ায় ছাত্রদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেন তাদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। আমরা যেন তাদের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারি। আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িকভাবে বাঙালি জাতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা, সম্প্রীতির বন্ধনের মাধ্যমে মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যেতে চাই। শিক্ষার্থীরা যেন আরও বড় পরিসরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিতর্কের জোরে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা।’