যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য শেভেনিং বৃত্তি

শেভনিং স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনের কিংস কলেজ ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পড়ছেন লেখক
শেভনিং স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনের কিংস কলেজ ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পড়ছেন লেখক

যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় একটি বৃত্তি হলো ‘শেভেনিং স্কলারশিপ’। যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস (এফসিও) ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন বৃত্তির অর্থায়ন করে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবেন—এমন যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণদের বৃত্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয় শেভেনিং বৃত্তি। এই বৃত্তির আওতায় যুক্তরাজ্যের একটি নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পাওয়া যায়।

শেভেনিং বৃত্তি পেয়ে আমি এখন লন্ডনের কিংস কলেজ ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে গ্লোবাল মেন্টাল বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছি। বৃত্তির পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ভিন্ন ভিন্ন ধাপে আমার প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে। তবে এই বৃত্তি পাওয়ার যোগ্যতা আসলে অর্জন করেছি গত ১০ বছরে। আমি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করি ২০০৯ সালে।

এরপর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) কাজ করেছি। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করি ২০১৫ সালে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নিয়ে গবেষণার জন্য ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল থেকে তরুণ গবেষক হিসেবে পাওয়া সম্মাননা আমাকে বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে দিয়েছে। যাঁরা শেভেনিং বৃত্তির জন্য আবেদন করতে চান, তাঁদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতেই এই লেখা।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শেভেনিং বৃত্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পড়ছেন। বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা, নেতৃত্বদানের অভিজ্ঞতা, নিজের দেশ ও সমাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাবের দিকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৃত্তির মাধ্যমে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে শিক্ষার্থীদের দুই বছর কাজের অঙ্গীকার করতে হয়। 

বৃত্তির সাধারণ যোগ্যতা
শেভেনিং কর্তৃপক্ষ বৃত্তির আবেদনের জন্য যোগ্যতা হিসেবে পড়াশোনাকে বেশ গুরুত্ব দেয়। স্নাতক পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ডিগ্রি আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তির সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা হয় বৃত্তির ক্ষেত্রে। বৃত্তির জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া বৃত্তির জন্য ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা আইইএলটিএসে ন্যূনতম ৬.৫ স্কোর থাকতে হবে। 

যেভাবে আবেদন করবেন
যুক্তরাজ্য সরকারের শেভেনিং বৃত্তির জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্সে আবেদন করতে হবে। আবেদনের জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন। ইংরেজি ভাষায় দুটি রেফারেন্স লেটার বা সুপারিশপত্র, পাসপোর্ট/জাতীয় পরিচয়পত্র, সর্বশেষ যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তার সনদ আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভর্তির ‘অফার লেটার’ সংযুক্ত করতে হবে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচনের পর মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনে। 

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে 
 আবেদনে সময় সব তথ্য ঠিকঠাকভাবে দিতে হবে

 নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা, আগামী দিনের নেতৃত্বদানের সম্ভাবনা বৃত্তিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়। 

 আপনি যদি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, সেটিও কাজে আসবে। 

এ বছরের বৃত্তির আবেদনের শেষ তারিখ ৫ নভেম্বর। বৃত্তির বিস্তারিত জানা যাবে chevening.org ওয়েবসাইট থেকে।