নাটক আর আবৃত্তির মেয়ে

রুহিনা শারমিন
রুহিনা শারমিন

অভিনয়, আবৃত্তি—দুটোই সমান গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন রুহিনা শারমিন। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী তাঁর এই প্রতিভা দিয়ে যেমন বন্ধুমহলে আলোচিত, তেমনই জনপ্রিয় ক্যাম্পাসে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যাপীঠে রয়েছে তিনটি সাংস্কৃতিক সংগঠন—উচ্চারণ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও বিবর্তন যশোর এমএম কলেজ শাখা। এর মধ্যে রুহিনা বিবর্তন যশোরের এমএম কলেজ শাখায় নাটক ও আবৃত্তির নিয়মিত চর্চা করেন। ক্যাম্পাসের মধুমঞ্চে বিশেষ দিবসগুলোয় আয়োজিত নানান অনুষ্ঠানে নাটক আর কবিতা আবৃত্তির জন্য ডাক পড়ে রুহিনার। ‘গত বছর বসন্তবরণ উৎসবে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের “একটি সংলাপ” কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলাম। তাতে একটি লাইন ছিল “তুমি চাও আমার ভালোবাসা”। ওই কবিতা আবৃত্তির পর থেকে ক্যাম্পাসে বন্ধুরা দেখলেই মজা করে বলে “তুমি চাও আমার ভালোবাসা”।’ বলেই হেসে ফেলেন তিনি। নাটক আর আবৃত্তি নিয়মিত হওয়ায় একটা বিশেষ সুবিধাও পান রুহিনা। বলছিলেন, ‘পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে আমাকে কোনো দিন লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। আমি লাইনে দাঁড়ালেই কেউ না কেউ এগিয়ে এসে আমার টাকা জমা দিয়ে দেন।’

মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মঞ্চেও উঠেছেন রুহিনা শারমিন। বিবর্তন যশোরের মাতব্রিং নাটকে ‘কলাবতী সাংমা’ চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই সুবাদে ঘুরেছেন ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে। এ ছাড়া পাইচো চোরের কিচ্ছা নাটক নিয়েও কলকাতার মঞ্চ মাতিয়ে এসেছেন গত বছর।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মামুন-উর-রশিদ বলছিলেন, ‘শুধু অভিনয় আর আবৃত্তিতে নয়, লেখাপড়ায়ও রুহিনা শারমিন অনেক ভালো। আমি তাঁর কয়েকটি অনুষ্ঠান দেখেছি। আমাদের ব্যবস্থাপনা বিভাগের গর্ব সে।’ ২০১৭ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা পর্যায়ে বাংলা কবিতা আবৃত্তি ও ২০১৬ সালে তাৎক্ষণিক অভিনয় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন রুহিনা শারমিন। ২০১৬-১৭ বর্ষে ধ্রুব পরিষদের আবৃত্তি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করে আবৃত্তি মুকুল উপাধি পেয়েছেন।

মফস্বল শহরে মেয়েদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। রুহিনার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘পরিবারের চেয়ে সমাজের লোকজনের বেশি আপত্তি। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় একক অভিনয়ে আমি প্রথম হয়েছিলাম। স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ে সেই আমাকেই শুরুতে পরিবারের অমতে নাটকে অভিনয়ের জন্য ভারতে যেতে হয়েছিল। পরে অবশ্য পরিবারের সদস্যরা আর বাধা দেননি।’