সম্মেলন থেকে শেখা

আর্কএশিয়ার আয়োজনের সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ছবি: তিহি মনি
আর্কএশিয়ার আয়োজনের সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ছবি: তিহি মনি

বড়সড় কনটেইনারগুলো সাধারণত জাহাজ কিংবা রেলগাড়িতে চোখে পড়ে। সে রকম একটা কনটেইনার হঠাৎ সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় জায়গা পেল কী করে! কনটেইনারে একদল মানুষ আঁকছিলেন বাংলাদেশের ঘরবাড়ি ও বিখ্যাত সব স্থাপনার ছবি। যেন পুরো বাংলাদেশটাই এক ‘ক্যানভাসে’ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা। আর আশপাশে ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ ঢুকে পড়ছিলেন কনটেইনারের ভেতর। দেখে বোঝা যায়, বেশ বড় কোনো কর্মযজ্ঞের আয়োজন চলছে। 

গত ৩১ অক্টোবর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে উদ্বোধন হয় ‘বিল্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রদর্শনী। দেশের আরও পাঁচটি জায়গায় এই প্রদর্শনী ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ও এশিয়ার স্থপতিদের সংগঠন আর্কএশিয়ার (আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়া) যৌথ আয়োজনে ২১টি দেশের স্থপতিদের সম্মেলন উপলক্ষে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। 

আর্কএশিয়ার ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। আর্কএশিয়া ফোরাম ২০ নামক এই আয়োজনে তাই প্রদর্শনীর পাশাপাশি নির্মাণ মেলা, সেমিনার, নবীনদের ফোরাম, পুরস্কার বিতরণী, বিদেশি অতিথিদের জন্য হেরিটেজ ওয়াক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্রেন্ডশিপ নাইট ইত্যাদি চলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, হাতিরঝিল, পানাম নগরসহ অন্যান্য স্থানে। বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের ১ হাজার ৫০০–এর বেশি স্থপতি একত্র হয়েছেন এই আয়োজন ঘিরে। 

স্থাপত্য নিয়ে এই বিশাল আয়োজনের সুযোগে স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও স্বনামধন্য, অভিজ্ঞ স্থপতিদের সঙ্গে দেখা করার ও তাঁদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছেন। তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করে আয়োজনটিকে প্রাণোচ্ছল করে তোলাই ছিল আয়োজকদের লক্ষ্য। আর্কএশিয়া ঢাকার জন্য লোগো বানানো, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অংশ নেওয়া ছাড়াও এ আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন সারা দেশের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম বর্ষের ২০০-২৫০ জন শিক্ষার্থী। 

৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চলতে থাকা অনুষ্ঠানগুলোকে সফল করতে কাজ করেছেন তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা। একই সঙ্গে বিদেশি অতিথিদের বিমানবন্দরে বরণ করা এবং তাঁদের আপ্যায়ন, ঢাকাসহ পুরো দেশের বিখ্যাত স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখানো ও আতিথেয়তার দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন কমিটিতে ভাগ করে দেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের ওপরই। 

নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী রোকাইয়া সানজিদা বলেন, ‘আমি ট্রান্সপোর্ট কমিটিতে ছিলাম। এ জন্য আমাকে বিদেশ থেকে আসা অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। কথাবার্তা হওয়ার পর বন্ধুত্বের সম্পর্কও গড়ে উঠেছে অনেকের সঙ্গে। আমার থিসিসের বিষয় নিয়েও কারও কারও সঙ্গে আলোচনা করেছি। সব মিলিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা।’ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, ‘খুলনা থেকে আমরা ১১ জন এসেছি। অনেক কিছু শিখেছি এখানে এসে। যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিলাম, অনেকাংশেই পূরণ হয়েছে।’ 

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী সারওয়ার শুভ বলেন, ‘দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান স্থপতিদের সংস্পর্শ পাওয়ার এমন চমৎকার অভিজ্ঞতা ছাত্রজীবনে কমই পাওয়া যায়। তাই যতটা শেখা সম্ভব এখান থেকে শিখতে চেষ্টা করেছি। টানা এক সপ্তাহ অনেক ধকল গেছে হয়তো, কিন্তু ক্লাসরুমের বাইরে এত কিছু শেখার সুযোগ কজনই–বা পায়! তাই সব রকম ক্লান্তি ভুলে সব কাজ আনন্দ নিয়েই করেছি।’ 

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জিয়াউল ইসলাম জানালেন আয়োজনটি নিয়ে তাঁর ভাবনা, ‘আমরা চেয়েছি আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন দেশের ও বিদেশের স্থপতিদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। একই সঙ্গে বিদেশি অতিথিরা যেন বাঙালির আতিথেয়তা সম্পর্কেও জানতে পারেন সে জন্য আমরা ভলান্টিয়ারদের তাঁদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে রেখেছি।’ 

স্বনামধন্য স্থপতিদের ভাবনা সম্পর্কে জানা, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানো ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ ভবিষ্যৎ স্থপতিদের কাজের প্রতি আরও একাত্মতা ও সৃজনশীলতা আনতে সাহায্য করেছে। তাই স্থাপত্যের শিক্ষার্থীরা এমন আন্তর্জাতিক আয়োজন দেশের মাটিতে বারবার দেখতে চান।