স্মৃতি জড়ানো খেলা

টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের দল। ছবি: সংগৃহীত
টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের দল। ছবি: সংগৃহীত

শুধু পড়ার টেবিলে নয়, খেলার মাঠেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী—আলমগীর কবির শাহীন ও বাবুল আক্তার। দুজনেই ছিলেন ১৯৯৫-৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় পা রাখার পর বছর কয়েকের মধ্যেই অকালে প্রাণ হারান মেধাবী এই দুই তরুণ। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় এক মাসের ব্যবধানে না ফেরার দেশে চলে যান শাহীন ও বাবুল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ছাড়াও রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে ম্যাচ ক্রিকেট খেলতেন শাহীন ও বাবুল। কিন্তু ১৯৯৭ সালে এক মাসের ব্যবধানে এই দুই তরুণের মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে যায় সম্ভাবনার পথ। এরপর থেকে তাঁদের স্মরণে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে শাহীন-বাবুল স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এ বিষয়ে রাবির আইন অনুষদের ডিন আহসান কবির বলেন, ‘শাহীন ও বাবুল দুজনেই কৃতী খেলোয়াড় ছিলেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলায় তাঁদের বিশেষ অবদান ছিল। তাঁদের স্মৃতি ধরে রাখতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে আমরা প্রতিবছর এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করি।’

প্রতিবছর টুর্নামেন্টে ছয়টি দল অংশ নেয়। যেখানে থাকে স্নাতক বিভাগের প্রতিটি বর্ষ থেকে একটি করে দল, স্নাতকোত্তর বিভাগের একটি ও আইন বিভাগের শিক্ষকদের একটি
 দল। আর টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্বে থাকেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

বরাবরের মতো এ বছরও টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব কাঁধে পড়েছিল তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর। তবে দায়িত্বের বাইরেও ভিন্নধর্মী কাজ করেছেন আয়োজক শিক্ষার্থীরা। টুর্নামেন্ট আয়োজনের পাশাপাশি তাঁরা তৈরি করেছেন একটি তথ্যচিত্র। যাতে উঠে এসেছে শাহীন ও বাবুল সম্পর্কিত নানা অজানা তথ্য। পাশাপাশি ভিডিওতে ছিল অকালপ্রয়াত এই দুই শিক্ষার্থীর পরিবার, সহপাঠী ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বক্তব্য।

এ বিষয়ে কথা হয় এবারের টুর্নামেন্টের আহ্বায়ক মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর শাহীন-বাবুলের স্মরণে টুর্নামেন্ট আয়োজন হয়ে থাকলেও তাঁদের সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থীই তেমন কিছু জানতেন না। তাই আমরা এই ভিডিওর মাধ্যমে শাহীন ও বাবুল সম্পর্কে সবাইকে জানাতে চেষ্টা করেছি।’

নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে মাঠে গড়ায় এবারের আয়োজন। যার সমাপ্তি ঘটে ১৫ নভেম্বরের ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে। ফাইনালে মাঠে নামেন এলএলবির প্রথম বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। টসে জিতে তৃতীয় বর্ষের অগ্রজদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় প্রথম বর্ষ। নির্ধারিত ১৪
ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান সংগ্রহ করেন তৃতীয় বর্ষের খেলোয়াড়েরা।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি প্রথম বর্ষের ব্যাটসম্যানরা। পাঁচ উইকেটের বিনিময়ে নির্ধারিত ১৪ ওভারে ১০০ রান করতে সক্ষম হন তাঁরা। ফলে ৫৪ রানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ফাইনাল ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন আসিফ আহসান। অন্যদিকে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার পান প্রথম বর্ষের ওয়ালিদ তুহিন।

চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান। এ সময় সেখানে আইন বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক এবং শাহীন ও বাবুলের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।