সৃজনশীল প্রশ্ন থাকছে না স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায়

প্রথম আলো ফাইল ছবি।
প্রথম আলো ফাইল ছবি।

ঢাকা মহানগরের সরকারি স্কুলগুলোতে এবার ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষায় সৃজনশীল ও বিবরণমূলক পদ্ধতির প্রশ্ন আর থাকছে না। তার পরিবর্তে পাঠ্যবই থেকেই প্রশ্ন করা হবে, যার উত্তর হবে খুব সংক্ষিপ্ত।

তবে প্রথম শ্রেণিতে আগের মতোই লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আর নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলের (জিপিএ) ভিত্তিতে। আগামীকাল রোববার থেকে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফরম অনলাইনে পাওয়া যাবে। ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফরমের দাম ১৭০ টাকা।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় আগে সৃজনশীল বা বিবরণমূলক প্রশ্নপত্র করার কারণে উত্তরপত্র মূল্যায়নে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ পার্থক্য হতো। এতে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অনেকেই বঞ্চিত হতো। উত্তরপত্র মূল্যায়নেও বেশ ঝামেলা হতো। যেহেতু এটি একাডেমিক নয়, বাছাই পরীক্ষা, তাই নতুন নিয়মে পরীক্ষা নেওয়া হবে। 

মাউশির সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৫০ নম্বরের এবং চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। ২০১৯ সালের শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের মধ্য থেকে প্রশ্ন করা হবে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সময় শ্রেণি উপযোগী শব্দ, বাক্য তথা ভাষা ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন মাউশির কর্মকর্তারা।

কোন শ্রেণিতে কত আসন

ঢাকা মহানগরের ৩৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত তিনটি শাখাকে (ফিডার শাখা নামে পরিচিত) মোট তিনটি ভাগে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এসব বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আসন আছে ১১ হাজার ৩১৮টি। এগুলোর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ১ হাজার ৩৮০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৮৩৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ২ হাজার ১০৯, চতুর্থ শ্রেণিতে ৯৪৯, পঞ্চম শ্রেণিতে ৫২৪, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩ হাজার ৫০৯, সপ্তম শ্রেণিতে ৪৯৬, অষ্টম শ্রেণিতে ৪৩১ এবং নবম শ্রেণিতে মোট ১ হাজার ৮৫টি আসন রয়েছে। আগের মতোই ক্যাচমেন্ট (ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা) এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা রয়েছে।

আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ

অনলাইনে (http://gsa.teletalk.com.bd) আবেদন নেওয়া শুরু হবে ১ ডিসেম্বর। চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভর্তির জন্য প্রথম শ্রেণিতে লটারি হবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। এর আগে তিন দিনে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির পরীক্ষা হবে। তিনটি গ্রুপের মধ্যে ‘এ’ গ্রুপের বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৮ ডিসেম্বর। এই গ্রুপের বিদ্যালয়গুলো হলো গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নিউ গভ. গার্লস হাইস্কুল, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (প্রভাতি), ধানমন্ডি কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রূপনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আজিমপুর গভ. গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরখান সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেখ জামাল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালাচাঁদপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (ফিডার শাখা)।

 ‘বি’ গ্রুপের বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৯ ডিসেম্বর। এই গ্রুপের বিদ্যালয়গুলো হলো মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, গভ. মুসলিম হাইস্কুল, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল, ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, হাজী এম এ গফুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জুরাইন শেখ কামাল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, দারুস সালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সবুজবাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুলের ফিডার শাখা।

 ‘সি’ গ্রুপের বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা হবে ২০ ডিসেম্বর। এই গ্রুপের বিদ্যালয়গুলো হলো ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুল, আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, টিকাটুলী কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ভাষানটেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ মনু মিঞা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ফিডার শাখা এবং লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

সমাপনীর ফলের মূল্য নেই

ভর্তির বিষয়ে মাউশির জারি করা নিয়মানুযায়ী, নবম শ্রেণিতে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এই শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে না। জেএসসি ও জেডিসির ফল প্রকাশের পর এই শ্রেণিতে ভর্তির কাজ শুরু হবে। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এই শ্রেণির ভর্তিতে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। অথচ দুটিই পাবলিক পরীক্ষা। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল কি ভর্তির ক্ষেত্রে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ও মাউশির উপপরিচালক মো. এনামুল হক হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।