কুয়াশায় ঘেরা সু-আশার উৎসব

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়েছে কুয়াশা উৎসব
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়েছে কুয়াশা উৎসব

‘কুয়াশায় সু-আশায় কহ কুশলাদী’—এই বাণী সামনে রেখে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল প্রথমবারের মতো কুয়াশা উৎসব। গত ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান।

শীত এলেই যে একটা জবুথবু ভাব চলে আসে আমাদের মধ্যে, তা কাটিয়ে সবাইকে প্রাণবন্ত-প্রাণচঞ্চল করে তোলার জন্য আমাদের এ উৎসব। সঙ্গে বাংলার সাংস্কৃতিক সভ্যতা তুলে ধরার চেষ্টাও বটে। শীত মানে যে শুধুই কম্বল আর শীতের পোশাকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা নয়, শীত যে উৎসবেরও, সেটাই আমরা দেখাতে চেয়েছি এ আয়োজনের মাধ্যমে। আমাদের অনুষ্ঠান দুই দিনব্যাপী, কিন্তু এই দুই দিনের অনুষ্ঠানের পেছনে রয়েছে অনেক দিনের পরিশ্রম, অনেক আনন্দ, কষ্ট। এসব পেরিয়ে পেয়েছি আমাদের উৎসবের দুটি দিন। এখানে অনেক শিক্ষার্থী দিনরাত এক করে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দাঁড় করিয়েছে আমাদের অনুষ্ঠান।

আজকাল দুই ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান করতে গেলেও মানুষ পৃষ্ঠপোষক (স্পনসর) খোঁজে। অথচ আমরা পুরো দুই দিনের একটি অনুষ্ঠান নামিয়ে ফেলেছি, কোনো পৃষ্ঠপোষক ছাড়াই! তাহলে কেমন করে সবকিছুর বন্দোবস্ত হলো? ওই যে বললাম, শিক্ষার্থীদের দিনরাত পরিশ্রমের ফসলই এ আয়োজন। কাজ করতে করতে কখন যে রাত তিনটা পেরিয়ে গেছে, টেরই পাইনি! আবার খুব সকালে শীতে কাঁপতে কাঁপতে সবাই দলবেঁধে হাজির হয়ে গেছে নানা কাজে হাত লাগাতে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গান গেয়ে, শোভাযাত্রা করে, গণসংযোগ করে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সব শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের খবর ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে; আমরা পেয়েছি মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে শুনে তো অবাক! শীত নিয়ে আয়োজন—তার নাম আবার কুয়াশা উৎসব! যে শুনেছে, সে-ই উৎসাহ দিয়েছে। 

আশপাশের সবার মতামত, মনোভাব ছিল ইতিবাচক। আর এগুলোই আমাদের প্রথম কুয়াশা উৎসবের যাত্রাকে করেছে গতিশীল। শিক্ষকেরা ছিলেন আমাদের পাশে; এমন একটি ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান হচ্ছে জেনে তাঁরাও দারুণ খুশি হয়েছেন। আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রগতিশীল সংগঠন। প্রচারণা থেকে শুরু করে মঞ্চ তৈরি, স্টল তৈরি, আলোকসজ্জা—সবকিছু করেছে শিক্ষার্থীরা মিলে। যেন সবার হৃদয়ের সঙ্গে মিশে গেছে এ উৎসব, কোনো বৈরী পরিবেশ আমাদের থামাতে পারেনি। 

উৎসবে চারটি গানের দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা হলো মাদল, স্বরব্যাঞ্জো, দৈত্যদল ও বাংলা ফাইভ। সঙ্গে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরিবেশনা। দুটি দিন যে কীভাবে কেটে গেছে, কেউ বুঝতেই পারিনি। নানা মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় ডুবে ছিল সবাই। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন আমাদের অনুষ্ঠানে; জানিয়েছেন শুভকামনা ও শুভেচ্ছা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন বিভাগের ডিন মহোদয়সহ প্রক্টরিয়াল বডির পক্ষ থেকে পেয়েছি শুভেচ্ছাবাণী; যা জুগিয়েছে নতুন উদ্যম। স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল বিভিন্ন প্রকাশনীর বই দিয়ে, সঙ্গে ছিল হাতের কাজ করা বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম; পারফরমিং আর্ট। 

আর হ্যাঁ, পিঠাপুলি ছাড়া শীত হয় নাকি? তাই সঙ্গে ছিল বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পায়েস। অনুষ্ঠান ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানের ভাবনাটাকে উৎসবে রূপ দেওয়া খুব সহজ ছিল না; তবু এই প্রথমবার উৎসবের পথচলা শুরু হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল; সামনের বছর এগুলো কাটিয়ে উঠব আমরা। প্রতিবছর উৎসব নতুন রূপ পাবে; সব শ্রেণির মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেবে এই ‘কুয়াশা উৎসব’—এটাই প্রার্থনা। 

নওসাদ আল সাইম 
দর্শন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল