চবিতে পান থেকে চুন খসলেই সংঘর্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির বহিষ্কারের দাবিতে এক পক্ষের ঝাড়ু মিছিল। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসের সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে।  ছবি: প্রথম আলো
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির বহিষ্কারের দাবিতে এক পক্ষের ঝাড়ু মিছিল। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসের সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো

পান থেকে চুন খসলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। গত চার মাসেই তাঁদের মধ্যে পাঁচবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ভাঙচুর করা হয় প্রক্টর ও পুলিশের গাড়ি, গোলচত্বরের ওয়াচ টাওয়ার এবং হলের কক্ষ। কিন্তু অতীতের মতো জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ গত বুধবার বিকেলে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুটি উপপক্ষ। এরপর থেকে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে একটি ধারার নেতা-কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্য ধারাটি আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। কিন্তু এ দুটি ধারা আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। এসব উপপক্ষের মধ্যেই মূলত সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটছে।

ছাত্রলীগের এসব ‘অছাত্রমূলক কর্মকাণ্ডে’ হতাশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুজিব বর্ষের মধ্যেই ছাত্রলীগ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এতে করে ছাত্রলীগ মুজিব বর্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এরা স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণেই এ কাজগুলো করছে।

সংঘর্ষের চিত্র
কথা-কাটাকাটি, গায়ে ধাক্কা লাগার মতো ‘সস্তা’ ঘটনায় যেমন সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তেমনি হলের আসন দখল নিয়েও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারামারি করছেন। গত ছয় বছরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের মধ্যে অন্তত দেড় শ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ছাত্রলীগের অন্তত এক শ কর্মী, নিহত হয়েছেন একজন। গত তিন বছরে অন্তত সাতটি বড় ধরনের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ গত বুধবার বিকেলে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষে জড়ায় চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও বিজয়। দুই দফা সংঘর্ষে সিএফসির এক কর্মীকে প্রথমে মারধর করেন বিজয়ের কর্মীরা। পরে সিএফসির নেতা-কর্মীরা দলবদ্ধ হয়ে সোহরাওয়ার্দী হলে গিয়ে বিজয়ের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন বিজয়ের নেতা-কর্মীরা। এর আগে গত ২ ডিসেম্বর হলের টিভি কক্ষে বৈঠক করাকে ঘিরে সংঘর্ষে জড়ায় সিএফসি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস। সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায় গিয়ে পুলিশের চারটি ও প্রক্টরের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গত পাঁচ বছরে সংঘর্ষ হয়েছে এক শটিরও বেশি।

>

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের মধ্যে অন্তত দেড় শ বার সংঘর্ষের ঘটনা
একই সময়ে অন্তত ২০ বার অবরোধ

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, ব্যবসায়ী ছাত্রলীগের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিক্রিয়াশীল একটি মহল কাজ করে যাচ্ছে। যদিও বগিভিত্তিক রাজনীতি এখানে নিষিদ্ধ। এখানে ছেলেরা ২০ টাকা দিয়ে ভাত খেতে পারে না। কিন্তু ৫০০ টাকা দিয়ে রামদা কিনতে পারে।

ছুতো পেলেই অবরোধ
বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন কিংবা সংঘর্ষ—ছুতো পেলেই অবরোধের ডাক দেয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনটির বিভিন্ন উপপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার অবরোধের কারণে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটা শাটল ট্রেননির্ভর। সাড়ে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ শতাংশই এ বাহনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অবরোধে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখায় ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। গত পাঁচ বছরে অবরোধ ডাকা হয়েছে অন্তত ২০ বার। সবশেষ গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকের বহিষ্কারের দাবিতে অবরোধ ডাকে ‘বিজয়’ উপপক্ষ। আর গতকাল একই দাবিতে ঝাড়ু মিছিল করে বিজয়ের নেতা-কর্মীরা। এর আগে গত ১ ডিসেম্বরে নিজেদের দুই নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ডাকে সিএফসি। অবরোধে সবচেয়ে বেশি হামলা হয় শাটল ট্রেনে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, এখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। এই সময়টাই সংগঠনকে গোছানো ও শক্তিশালী করার সময়। কিন্তু সেটি না করে তাঁরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। এর ফলে সামনে যখন খারাপ সময় আসবে, তখন অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাঁরা মোকাবিলা করতে পারবে না।