স্টেথিসকোপ, তুলি আর মঞ্চ

নিশাত তাসনিম
নিশাত তাসনিম

স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি তুমি নাইটিঙ্গেল-এ তিনি একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগী, তুলি হাতে দেয়ালে যখন আলপনা আঁকেন, তখন তিনি চিত্রশিল্পী। আবার আবৃত্তি করার সময় দক্ষ বাচিকশিল্পী। দলীয় নৃত্য ও দলীয় সংগীতেও তাঁর নেতৃত্ব সবাইকে ছাপিয়ে যায়। এই শিল্পী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী। কলেজের সাংস্কৃতিক সপ্তাহের সেরা পারফরমার। এককথায় ক্যাম্পাসের সবার প্রিয়মুখ। তাঁর নাম নিশাত তাসনিম। সবাই ডাকে মৌ।

সাংস্কৃতিক সপ্তাহে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘না পাঠানো চিঠি’র সঙ্গে তাঁর অভিনয় ছিল অসাধারণ। মানুষের সেবা করার নেশাসহ আরও অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নিশাতের শিক্ষাজীবন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের গুণী শিক্ষকদের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার ছবিতে ভরে গেছে তাঁর অ্যালবাম। এখন পড়ছেন পঞ্চম বর্ষে।

মানবতার সেবায় তাঁর কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল সামাজিক সংগঠন সন্ধানীতে যোগদানের মধ্য দিয়ে। সন্ধানীর ২০১৭-১৮ সেশনের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং এর মাধ্যমে সন্ধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। টিকা ও রক্তদানের মাধ্যমে ছাড়াও বিভিন্ন সময় সন্ধানীর অনুষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে শিল্পীসত্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। অনুষ্ঠানের জন্য পোস্টারিং করার দায়িত্ব নিয়েছেন। নিজের হাতে দেয়ালে আলপনা এঁকেছেন, ককশিটের ওপর কাজ করেছেন। অবশ্য তুলি ধরার কাজটি তাঁকে ভালো করে শিখিয়েছেন বিভাগের বড় আপু সাবিহা তিথি।

অভিনয়ের সূচনা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কালচারাল উইক ২০১৭–এর মাধ্যমে, যেখানে অভিনয়ে প্রথম ও চিত্রাঙ্কনে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি। এর সূত্র ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ফিল্ম সোসাইটি পরিচালিত বিভিন্ন স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো তুমি কোন কাননের ফুল, ুমি নাইটিঙ্গেল, োলো আনাই মিছে।

এরপর থেকে কলেজের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুনর্মিলনী, জেলা সমিতির অনুষ্ঠান, ব্যাচ ট্যুর, ব্যাচ পিকনিকসহ বিভিন্ন আয়োজনের সাজসজ্জা, দেয়ালে আলপনা করা, উপস্থাপনা, মঞ্চনাটক, কবিতা, অভিনয় ও অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়মিত তাঁর কাঁধেই এসে পড়েছে। পড়াশোনার সূত্রে চিকিৎসাসম্পর্কিত প্রকল্প, সেমিনার ও প্রকল্পের কাজে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছুটে যাওয়া এখন নিশাত তাসনিমের কাছে নিত্যদিনের রুটিন।

এখন ডা. হারুন-অর-রশিদ পরিচালিত ফাগুন হাওয়ার গান নামের নতুন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতে কাজ করছেন। ক্যাম্পাসে নিশাতের কাজে সবাই মুগ্ধ। সহপাঠী পার্থ প্রতীম সেন বললেন, ‘তুমি নাইটিঙ্গেল-এ নিশাতের অভিনয় ছিল অসাধারণ।’ একইভাবে বললেন সহপাঠী সাবিহা আক্তার, ‘নিশাতের অভিনয় চমৎকার। ভালো আবৃত্তি করে। গানের গলাও আছে। তার সিজোফ্রেনিয়া রোগীর অভিনয় ছিল দেখার মতো। ক্যাম্পাসে সহপাঠীরা সবাই তাঁকে ভালোবাসে। ছোটরা শ্রদ্ধা করে, একইভাবে বড়রাও স্নেহ করেন।’