কেন পড়ব গণিত

>ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ গণিত নিয়ে বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ

বিজ্ঞানের সূত্রগুলোকে গণিতের সাহায্যে প্রকাশ করে, গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বাস্তব সমস্যাগুলো গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে সমাধান করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগ রয়েছে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, বাণিজ্য অনুষদসহ অনেক অনুষদের শিক্ষার্থীদেরই গণিত বিভাগের অধীনে সম্পূরক কোর্স পড়তে হয়। তবে আজ আমরা কথা বলছি শুধু গণিত বিভাগ নিয়ে।

কী পড়ানো হয়

বীজগণিত, জ্যামিতি, ক্যালকুলাস, গাণিতিক বিশ্লেষণ, রৈখিক বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব, অন্তরীকরণ সমীকরণ ইত্যাদি স্নাতক পর্যায়ের প্রাথমিক কোর্স হিসেবে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে পড়ানো হয়। সম্পূরক বিষয় হিসেবে থাকে পরিসংখ্যান, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে কিছু ল্যাব কোর্স রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে গণিতের প্রাথমিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করার সুযোগ থাকে। এ জন্য কিছু ল্যাব কোর্স রয়েছে। এ ছাড়া সি, সি প্লাস প্লাস, ম্যাটল্যাবসহ বেশ কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা শেখানো হয়।

অধিকাংশ বাস্তব ক্ষেত্রে গাণিতিক সমীকরণগুলোর সমাধানের সঠিক মান বের করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বিচ্যুতি নিয়ন্ত্রণে রেখে আসন্ন মান নির্ণয় করা হয় এবং এই পদ্ধতিকে সংখ্যাসূচক বিশ্লেষণ বলে। এই পদ্ধতিতে এলগরিদমের মাধ্যমে সমীকরণ সমাধান করা হয় এবং গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিচ্যুতির নিয়ন্ত্রণ এবং নিরূপণ করা হয়। হিসাব কষে বা ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে মান নির্ণয় প্রায় অসম্ভব। তাই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মান নির্ণয় শেখানো হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখার সমস্যাগুলোকে অন্তরীকরণ সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় এবং সমাধান করা হয়। এ জন্য তৃতীয় বর্ষে সংখ্যাসূচক বিশ্লেষণবিষয়ক কোর্স রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে অত্যানুকূল ফলাফল নির্ণয় করার অপরিহার্য বিষয় হিসেবে রৈখিক প্রোগ্রামিং কোর্স রয়েছে। এ ছাড়া বিমূর্ত গণিতের কোর্স হিসেবে বিমূর্ত বীজগণিত (অ্যাবস্ট্রাক্ট অ্যালজেব্রা), গ্রুপ তত্ত্ব (গ্রুপ তত্ত্ব) ইত্যাদি পড়ানো হয়।

চতুর্থ বর্ষে, আংশিক অন্তরীকরণ সমীকরণের তাত্ত্বিক ও সংখ্যাসূচক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয় কোর্স হিসেবে ফাংশনাল অ্যানালাইসিস শেখানো হয়। মহাকাশ বিজ্ঞানের গাণিতিক বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে অন্তরীকরণ জ্যামিতি ও টেনসর বিশ্লেষণ পড়ানো হয়। প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, প্রবাহ বলবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে গুণগত বিশ্লেষণের জন্য কিছু কোর্স করতে হয়। এ ছাড়াও আরও নানা বিষয় থাকে। চতুর্থ বর্ষে গণিতের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে গবেষণামূলক প্রতিবেদন লিখতে হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়েও উচ্চতর গাণিতিক বিশ্লেষণের বিভিন্ন কোর্স চালু রয়েছে। স্নাতকোত্তরেও গবেষণামূলক প্রতিবেদন বা থিসিস লিখতে হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে।

ক্যারিয়ার কোথায়

গণিত বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশা, বিশ্বব্যাপী উচ্চতর শিক্ষা (পিএইচডি) ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি চাকরি, ব্যাংক ও অন্যান্য করপোরেট চাকরিতেও গণিতের স্নাতক উর্ত্তীণ শিক্ষার্থীরা যুক্ত আছেন।

ভবিষ্যৎ কী

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ভবিষ্যতে মানুষ তাঁদের চাকরি হারাবে কি না, এটি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। তবে ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে গণিতের গুরুত্ব কোনো অংশে কমবে না। কারণ, এই যুগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে গণিতের ভাষার ওপর নির্ভর করেই। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু মানুষের গণিত ব্যবহার কোনোভাবেই কম হবে না।

কারা পড়বে

গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের ভাষায়, ‘গণিত তার কাছেই তার সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয়, যে বিশুদ্ধ মন ও ভালোবাসা নিয়ে গণিতের দিকে অগ্রসর হয়।’ সে ক্ষেত্রে বলা যায়, যেসব শিক্ষার্থী নিজেকে গণিতের জন্য সম্পূর্ণ উৎসর্গ করতে পারবে, তাদেরই এই বিভাগে পড়া উচিত। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীরা গণিতের দক্ষতা প্রয়োগ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের গুরুত্ব বাড়াতে সক্ষম হবে।