লাল বাসের গায়ক: ইয়াছির আরাফাত

ইয়াছির আরাফাত।
ইয়াছির আরাফাত।
>

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা পরিচিতি পেয়েছেন গীতিকার হিসেবে। অনেকে নিজেরাই গান লেখেন, গান করেন।

‘অবনি অবনি অবনি/বোঝোনি এ ভালোবাসা আমার/লাল বাস জানালা পাশ/পুরোনো গানে ডেকেছি কতবার।/ছিল সন্ধের ঘরে ফেরা তাড়া/ছিল অকারণে চোখে চোখ পড়া/ছিল দুষ্টুমি হাসি মন কাড়া/এভাবে কেটে যেত দিন সাড়া/অবনি অবনি বোঝোনি অবনি/এ চোখের ভাষা আমার।’

ইয়াছির আরাফাতের লেখা এই গান বোধ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন-পুরোনো অনেক ছাত্রের মনের কথা বলে। তাই ইয়াছির আর তাঁর ব্যান্ড কৃষ্ণপক্ষ যখন মঞ্চে ‘লাল বাস’ গাইতে শুরু করেন, গলা মেলায় অনেকে।

ইয়াছির অভিনেতা হিসেবে নিজেকে মঞ্চে দেখতে চেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে ভর্তিও হলেন। পঞ্চম সেমিস্টারে ক্লাসে বসে শিখছিলেন নাটকের বিভিন্ন তাত্ত্বিক দিক। হঠাৎই তাঁর কাছে মনে হলো, নাটকের বিভিন্ন ধরন আর তত্ত্ব তো গানের সঙ্গেও মিলে যায়।

২০১৭ সালে শুরু হলো গান লেখা। জানালেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঘটা করে বসে, একেকটি অন্তরা মিলিয়ে কখনো সেভাবে গান লেখা হয়নি। মনের অজান্তেই লেখার চিন্তা মাথায় আসে। পকেট থেকে নোটবুক বের করে লেখা শুরু করে দেন। সুরটাও তুলে ফেলেন তখনই। তাঁর অধিকাংশ গানেই মিশে থাকে প্রকৃতির গল্প-কথা। আশপাশের বন্ধু আর প্রিয়জনদের গল্পগুলোও ঠাঁই পায় তাঁর লেখায়। কেয়াফুল, জলপালঙ্ক, লাল বাস কিংবা ভাঙা সাইকেল শিরোনামের গানগুলো শুনে তা-ই মনে হলো।

মূলত নিজের ব্যান্ডের জন্যই গান লেখেন ইয়াছির। ২০১৭ সালে বন্ধুরা মিলে ব্যান্ড গড়েছিলেন। ব্যান্ডের বেশির ভাগ গান, কথা ও সুর তাঁর, কয়েকটি গানের মূল গায়ক তিনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও তাঁরা কনসার্ট করে বেড়ান। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে নিজেদের গানে মঞ্চ মাতিয়েছেন তাঁরা।

ছায়ানটে নজরুলসংগীতের তালিম নিচ্ছেন ইয়াছির। সংগীতে তাঁর আগ্রহ আর ভালোবাসার জায়গা হলো নজরুলসংগীত। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ধরনের গান শুনি। তবে নজরুলসংগীতের প্রতি অন্য রকম একটা ভালো লাগা আছে।’ কি-বোর্ড বাজানোও শিখছেন তিনি। তবে গীতিকার পরিচয়টাই তাঁর বেশি পছন্দ। ইয়াছিরের গীতিকার হয়ে ওঠার পেছনে বড় অনুপ্রেরণা তাঁদের ব্যান্ডের বেইজিস্ট তারেক হোসেন। ইয়াছির বলেন, ‘আমি যেকোনো গান লিখেই আগে তারেক ভাইকে দেখাই। তাঁর পরামর্শ নিই। গান-বাজনা নিয়ে আমি যা কিছু করছি, সবকিছুতে তিনি আমাকে বটবৃক্ষের মতো করে ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন।’ বিশ্বের দরবারে বাংলা গানকে আরও বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ।

জাওয়াদুল আলম