আকাশের শিষ্য হতে চাই: সাঈদ মুহাম্মদ ইরফান

সাঈদ মুহাম্মদ ইরফান।
সাঈদ মুহাম্মদ ইরফান।
>

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা পরিচিতি পেয়েছেন গীতিকার হিসেবে। অনেকে নিজেরাই গান লেখেন, গান করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় গানের ক্যাম্পাস। শাটলে, ঝুপড়িতে, ক্লাসরুমে, প্রায় সবখানেই গান শোনা যায় কান পাতলেই। একসময় শাটলে গান গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু, নকীব খানের মতো সংগীতশিল্পীরা। এখন তাঁদের জায়গা নিয়েছেন সাঈদ মুহাম্মদ ইরফানের মতো তরুণেরা। কখনো সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ঝুপড়ি, কখনো জারুলতলায় দেখা যায় লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের এই ছাত্রকে।

গান গাওয়া ও লেখার পাশাপাশি অজানা উড়ন্ত বস্তু নামে একটি ব্যান্ডের মূল গায়ক ইরফান। ক্যাম্পাসে ছোট-বড় নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তাঁরা। অজানা উড়ন্ত বস্তু দুই বাংলার জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলির’ দ্বিতীয় অ্যালবামের নাম। নামেই বোঝা যায় ‘মহীনের ঘোড়াগুলির’ একটি প্রভাব রয়েছে ব্যান্ডের ওপর, ইরফানের ওপরও।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখেননি ইরফান। গান শোনা, বই পড়া ও নিজের চেষ্টায় গান লেখার ব্যাকরণ শিখছেন। চারপাশে যা কিছু ঘটে, সেসবের অভিজ্ঞতা গান লিখতে সাহায্য করে তাঁকে। আর এ গান লেখার অনুপ্রেরণা জোগান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শচীন দেববর্মন থেকে আজকের দিনের প্রিন্স মাহমুদ, মারজুক রাসেল, শিবু কুমার শীলের মতো শিল্পীরা।

গান শোনা ও লেখা বিষয়ে জানতে চাইলে ইরফান বলেন, ‘আজ থেকে চার দশক আগে যেভাবে প্রেমের দেখা মিলত, এখন এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেই প্রেম বদলে গেছে। এখন প্রেম নিয়ে গান লিখতে গেলে প্রযুক্তির নতুন উপাদানের প্রভাব পড়ে। চারপাশে হেঁটে যাওয়া মানুষ, রাস্তায় পড়ে থাকা পথশিশুর কান্না, গোলাপে বসা একটি মৌমাছি কখনো কখনো গানের উপজীব্য হয়ে ওঠে। যখন সমুদ্রে যাই, পাহাড়ে যাই, তখন প্রকৃতির স্পর্শে মনের ওপর একটা প্রভাব পড়ে। সেই প্রভাব কাজে লাগিয়ে গান লেখার চেষ্টা করি।’

ইরফানের মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশেরও পরিবর্তন হয়েছে। আগে রবীন্দ্রনাথ দেখতেন ভরা যৌবনা পুকুর, সবুজ শ্যামল মাঠ। আর এখন দেখা যায় নর্দমা, শহরজুড়ে দালান, ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা। এসবের এক প্রচ্ছন্ন প্রভাব শিল্পমনে পড়ে। সমাজ পরিবর্তনশীল। শিল্পও গতিপথ পরিবর্তন করে। তবে ধ্রুপদি সাহিত্য, শিল্প, সংগীত থেকে যায় যুগ যুগ ধরে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তরুণের লেখা একটা গান দিয়েই না–হয় শেষ করি, ‘রাত...কেন জানি শেষ হয়ে, শুরু হতে চায়—এখনো, ভোরের তারাগুলো—গুনতে চাই।/রোদ...আলো হয়ে থাকো যদি, তবু মনে হয়—কে জানি, দুঃস্বপ্নের বীজগুলো—কুঁকড়ে খায়।/তবু...বেঁচে থাকা যদি হয়, অনুমিত উদ্দেশ্য—আকাশের শিষ্য, হতে চাই।’

সুজয় চৌধুরী