যন্ত্র ও অ্যাপে গর্ভবতীর সেবা

আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন  মুম্বাইয়ের আইআইটিতে অনুষ্ঠিত টেক ফেস্টে। ছবি: খালেদ সরকার
আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন মুম্বাইয়ের আইআইটিতে অনুষ্ঠিত টেক ফেস্টে। ছবি: খালেদ সরকার

প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না। প্রকল্পটির লিখিত রূপ, যন্ত্রের নকশা, গবেষণাপত্র, ব্যবসায়িক মডেল, অ্যাপের ভিডিও—অনলাইনে এসব পাঠিয়ে তবেই ভারতের আইআইটি মুম্বাই টেক ফেস্টে যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ফুয়াদ আল হাসান ও তাঁর দল।

আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের তিন শিক্ষার্থীর দল ‘আলফা অপ্টিমাস ৩৬৯’ আইআইটির ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত তিন দিনের টেক ফেস্টে অংশগ্রহণ করেন। দলনেতা ফুয়াদ আল হাসান ছাড়াও এই দলে ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী চিন্ময় মণ্ডল এবং প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নুজহাতুল ইসলাম।

আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সিঁড়িতে বসে কথা হলো তাঁদের সঙ্গে। ফুয়াদ আল হাসান বলছিলেন, ‘আমরা এমন একটি যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করেছি, যার মাধ্যমে গর্ভবতী নারীরা হাসপাতালে না গিয়েও বাসায় বসে তাঁদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীদের জন্য। কেননা, তাঁরা সার্বক্ষণিক সেবার জন্য বাসায় গৃহকর্মী রাখতে পারেন না। কিন্তু আমাদের ডিভাইস ও অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিয়মিত তাঁরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।’

পাশেই বসে ছিলেন দলের আরেক সদস্য চিন্ময় মণ্ডল। তিনি ফুয়াদ আল হাসানের সঙ্গে যোগ করেন, ‘গর্ভবতী নারীদের জন্য যেসব পদার্থ বা বস্তু ক্ষতিকর, যা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেসব জিনিসের সংস্পর্শে এলে আমাদের যন্ত্রটি একটি অ্যালার্ম দেবে, যেন তিনি সচেতন হতে পারেন। যেমন ধরুন কার্বন মনোক্সাইড, সিগারেটের ধোঁয়া, ক্ষতিকারক রশ্মি কিংবা অ্যালকোহল—এসব কিছুর কাছাকাছি থাকলে আমাদের যন্ত্রটি সংকেত দেবে।’

যন্ত্রের পাশাপাশি একটি অ্যাপের পরিকল্পনাও তুলে ধরেছেন এই তরুণেরা। নাম ‘মাদার’স কেয়ার মোড’। এই অ্যাপে রোগী ও ডাক্তারের জন্য আলাদা সাইন আপের ব্যবস্থা করা আছে। এখানে একজন গর্ভবতী নারী সাইন আপ করলে, গর্ভবতী হওয়ার পর কোন সপ্তাহে কতটুকু খাবার প্রয়োজন, সেটি অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। এ ছাড়া ডাক্তারের ইন্টারফেস থেকে কখন কোন ওষুধ খেতে হবে, তা মনে করিয়ে দেওয়া হবে। সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে ডাক্তারকে ফোন করার উপায়ও থাকছে। কিউ আর কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে কোনটি কোন ওষুধ, তা বাংলায় বলে দেবে অ্যাপটি। এ ছাড়া আরও নানা সুবিধা পাওয়া যাবে অ্যাপের মাধ্যমে, জানালেন ফুয়াদ।

ফুয়াদরা যখন টেক ফেস্টে তাঁদের প্রকল্প উপস্থাপন করেন, বিচারকেরা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন। একদল বলছিল এটি সম্ভব, অন্য দল বলছিল এটি সম্ভব নয়। প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য সময় নির্ধারণ করা ছিল ৫ মিনিট, কিন্তু প্রায় ২৫ মিনিট ধরে নানা প্রশ্ন করেন বিচারকেরা। তবু যেন ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ স্থান পাওয়া হয়নি তাঁদের। কিন্তু বড় মঞ্চে নিজেদের ভাবনাটা তুলে ধরতে পেরেই এই তরুণেরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন বলে মনে করেন।