পাবলিক পরীক্ষায় 'এ'প্লাস পাওয়া কঠিন হচ্ছে

২০০১ সালে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে গ্রেড পদ্ধতি চালু করা হয়। ফাইল ছবি
২০০১ সালে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে গ্রেড পদ্ধতি চালু করা হয়। ফাইল ছবি

পাবলিক পরীক্ষায় ফলের সর্বোচ্চ সূচক ‘এ’ প্লাস পেতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে ৯০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নম্বর পেতে হবে। এর মাধ্যমে ‘এ’ প্লাস পাওয়া বা সর্বোচ্চ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (জিপিএ) অর্জন করা কঠিন হবে বলে শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন।

শিক্ষাবিদ ও পাবলিক পরীক্ষার কাজে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলছেন, এর ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর আরও চাপ এবং কোচিং ও প্রাইভেটের ওপর নির্ভরতাও বাড়বে। আবার কোনো কোনো শিক্ষাবিদ মনে করেন, ওপরের দিকে নম্বরের স্তর একাধিক হওয়াই ভালো। যারা খুব ভালো শিক্ষার্থী, তারাই সেটা অর্জন করবে।

চলতি বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা থেকেই পাবলিক পরীক্ষার ফল নতুন গ্রেডে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরপর আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা থেকেও নতুন গ্রেডে ফল প্রকাশ করা হবে। এতে ফলের সর্বোচ্চ সূচক হবে জিপিএ-৪, যা বর্তমানে জিপিএ-৫। নতুন গ্রেডে নম্বরের শ্রেণিব্যাপ্তি হবে আটটি, বর্তমানে আছে সাতটি।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে নতুন গ্রেড ঠিক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য পাঠিয়েছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, শিগগিরই এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং বিদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা এবং জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) নিয়ে ‘সামাজিক উন্মাদনা’ কমানোর লক্ষ্যেই সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ বা স্কেল ৪ ধরে নতুন গ্রেডে ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেরই পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, নতুন গ্রেড জিপিএ-৫-কে জিপিএ-৪ করা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন নেই। এতে পরীক্ষার ফলাফলে কোনো গুণগত পরিবর্তন আসবে না। তাঁর মতে, এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন উত্তরপত্র মূল্যায়নব্যবস্থা উন্নত করতে শিক্ষকদের যোগ্য করে তোলা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার বাইরের একটি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রথম আলোকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার কথা বলা হলেও নম্বর বিভাজনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে মিল রাখা হয়নি। যেমন বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নম্বর পেলে সেটিকে সিজিপিএ-৪ বলা হয়। কিন্তু বোর্ডের করা নতুন গ্রেডে জন্য ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে সেটিকে জিপিএ-৪ বলা হবে। এর ফলে আগে যেমন জিপিএ-৫-এর জন্য মাতামাতি হতো, এখন জিপিএ-৪ পাওয়ার জন্য আরও বেশি মাতামাতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

>

পাবলিক পরীক্ষার ফলের সর্বোচ্চ সূচক হবে ৪। প্রাপ্ত নম্বরের শ্রেণিব্যাপ্তি হবে আটটি। ৮০ থেকে ১০০ ধাপ ভেঙে দুই ভাগ। চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষা থেকে নতুন গ্রেডে ফল প্রকাশ। এরপর এসএসসি ও এইচএসসিতেও একই নিয়ম।

নতুন গ্রেডে ৮০ থেকে ১০০-কে দুই ভাগ করে দুটি স্তর করার পক্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নম্বরের শ্রেণিব্যাপ্তি বেশি হওয়া ভালো। শিক্ষার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে। যারা খুব ভালো, তারাই সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জন করবে। তবে তিনি শিক্ষার মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।

বর্তমানে গড়ে ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নম্বর পেলে সেটিকে জিপিএ-৫ বলা হয়। যাকে লেটার গ্রেডে বলা হয় ‘এ’ প্লাস। নতুন গ্রেডে প্রতিটি স্তরের জন্য নম্বরের পার্থক্য রাখা হয়েছে ১০ নম্বর। এতে সর্বোচ্চ সূচক পাওয়ার জন্য ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পেতে হবে। নিচের দিকে ৩৩ থেকে ৩৯ পেলে ‘ডি’ গ্রেড বা পয়েন্ট-১ বলা হবে।

বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় উপকমিটি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন বিচার-বিশ্লেষণ করেই এটি করা হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে এটি ভালো হবে।

২০০১ সালে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে গ্রেড পদ্ধতি চালু করা হয়। ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ৫ সূচকের (পয়েন্ট বা স্কেল) ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের ফলের মতো আগামী বছর থেকে প্রমিতকরণ (স্ট্যান্ডার্ডাইজড স্কোর, পরিসংখ্যানের একটি পদ্ধতি) করে ফল প্রকাশ করা হবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন বোর্ড, বিভিন্ন বিষয়, এমনকি আগের বছরের ফলের মধ্যে একধরনের সামঞ্জস্য রক্ষা করা হবে। বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের মাধ্যমে এ কাজটি হচ্ছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদৎ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্ট্যান্ডার্ডাইজড স্কোর করলে ফলে ভারসাম্য আসবে।

নতুন গ্রেড বা স্ট্যান্ডার্ডাইজড স্কোর করে ফল প্রকাশ করলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার কোনো উপকার হবে না বলে মনে করেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আমিরুল আলম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নতুন গ্রেডের নম্বর শ্রেণিব্যাপ্তির কারণে নেতিবাচক প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।