করোনা ঠেকাতে পদক্ষেপ নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও চোখে পড়ছে না। অথচ প্রতিদিন দুটি শাটল ট্রেনে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা যাওয়া-আসা করছেন। দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও ট্রেনের সূচি বাড়ানো কিংবা বিকল্প পরিবহনের কোনো উদ্যোগের আলামত দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রেও করোনা মোকাবিলায় কোনো রকম প্রস্তুতি নেই।

ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। যাতায়াত, শ্রেণিকক্ষ কিংবা ছাত্রাবাস—সব জায়গায় গাদাগাদি অবস্থার কারণে ভয়টা বাড়ছে। এই অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কিছু শিক্ষকও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন সাড়ে ২৭ হাজার। ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই যাতায়াত করেন শাটল ট্রেনে। এ ট্রেনে বগি থাকে সাত থেকে আটটি। প্রতিটি বগিতেই শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিড় থাকে। বর্তমানে এক জোড়া শাটল ট্রেন খোলার দিনে আটবার যাতায়াত করে। পাশাপাশি একটি ডেমু ট্রেন দুবার যাওয়া-আসা করে। গণজমায়েত এড়িয়ে চলতে বলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের সময়সূচি বাড়াতে কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগই নেই। ফলে আগের নিয়মে হাজারো শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে যাতায়াত করছেন। এ ছাড়া করোনা ঠেকাতে প্রতিরক্ষামূলক কোনো কমিটি এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি।

চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ১২ শয্যার কেন্দ্রটিতে গত এক সপ্তাহে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও কর্মকর্তা জ্বর-সর্দিকাশি নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে এসেছেন। তাঁদের সবাইকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সন্দেহজনক কেউ এলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে ঢাকা থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। এটি বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো হবে।

করোনা ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ১৪টি আবাসিক হলে অন্তত ৭ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। একই কক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। পাশাপাশি শাটল ট্রেনেও গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডাইনিং ও ক্যানটিনে একটি প্লেটে কয়েকজন পরপর খাবার খাচ্ছেন। কিন্তু ভালোমতো ধোয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তাঁরা। সবশেষ গত বছরের মার্চে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের মূল ফটক আটকে আন্দোলন করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ছিল বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও মানসম্মত খাবার পরিবেশন এবং পরিষ্কার থালাবাসন ব্যবহার করা।

২৭ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৯২৫ জন। করোনাভাইরাস ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদ্য বিদায়ী সভাপতি মো. জাকির হোসেনসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর প্রথম আলোকে বলেন, এই ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। ট্রেনে যাতায়াত করা কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন বিভাগে সচেতনতামূলক নোটিশ দেওয়া হবে, ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ড বসানো হবে। হলের নালা নর্দমা পরিষ্কার ও ডাইনিং-ক্যানটিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে খাবার রান্না ও পরিবেশন করতে নির্দেশ দেওয়া হবে। তবে শাটল ট্রেনের ভিড় কমানোর জন্য আপাতত কিছু করার নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের সময়সূচি বাড়িয়ে ও বাসের ব্যবস্থা করে করোনা পুরোপুরি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। ইতিমধ্যে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রক্টর কার্যালয় থেকে গণজমায়েতের কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না।