রাগবিতে রঙিন আঁচল

সিদরাতুল মুনতাহা
সিদরাতুল মুনতাহা

হ্যান্ডবল দিয়ে খেলাধুলার শুরু সিদরাতুল মুনতাহার। তখন সে শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের স্কুল শাখায় পড়ত। স্কুল পর্যায়ের টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিল পল্টন মাঠে। মুনতাহার খেলার ধরন আর ফিটনেস দেখে রাগবি খেলার প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম। সেই থেকে শুরু। এখন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী সিদরাতুল মুনতাহা রাগবি খেলোয়াড় হিসেবেই ক্যাম্পাসে পরিচিত। 

২০১৭ সালে জাতীয় নারী রাগবি প্রতিযোগিতায় কিশোরগঞ্জ জেলার হয়ে অংশ নিয়েছিল মুনতাহা। টুর্নামেন্টে রানারআপ হয় কিশোরগঞ্জ। আর মুনতাহার ঝুলিতে যোগ হয় সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। সেই থেকে রাগবির প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে আরও। 

স্কুলের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক সালমা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজ উদ্যোগেই মেয়েদের একটি রাগবি দল গঠন করেছিল সিদরাতুল মুনতাহা। ওই দল নিয়ে পরের বছর জাতীয় নারী রাগবি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করে শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ।

এ ছাড়া ওই বছরে মুনতাহার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় রাগবি দলে থেকে ডাক পাওয়া। জাতীয় দলের হয়ে ২০১৮ সালেই ভারতে খেলার সুযোগ পায় সে। 

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজেও সিদরাতুল মুনতাহার চেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে রাগবি দল। ক্যাম্পাসের মেয়েদের রাগবির মাঠে নিয়ে
আসছে সে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে দারুণ এক দলে গঠন করে ফেলেছে। ২০১৯ সালে আন্তকলেজ রাগবি টুর্নামেন্ট সামনে রেখে দলটি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল রাগবি ফেডারেশন ইউনিয়নের কোচ আব্দুল কাদেরের কাছ থেকে। প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েই রানারআপ হয়ে বাজিমাত করে মুনতাহার দল। সে বলছিল, ‘সেমিফাইনালে আমরা ঢাকা
কমার্স কলেজ দলের মুখোমুখি হয়েছিলাম। ম্যাচের একমাত্র গোলটা দিয়েছিলাম আমি। সেই গোলই আমাদের ফাইনালে পৌঁছে
দিয়েছে।’ 

খেলাধুলার পেছনে মুনতাহার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলো তার নানা মুজিবুল হক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সিং খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। নানা সব সময়ই চান, মুনতাহা যেন তাঁর মতো খেলোয়াড় হতে পারে। তাই তিনি সব সময়ই নাতনিকে খেলাধুলা ধরে রাখার পরামর্শ দেন। নানার পরামর্শেই পড়াশোনা ও খেলাধুলা—দুটোই সমানতালে চালিয়ে গেছে প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী। খেলতে গিয়ে পড়াশোনায় যে সে ফাঁকি দেয়নি, বোঝা যায় পরীক্ষার ফলাফলে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি আর এসএসসি—সব কটিতেই জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। 

ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে নানার দেখানো পথই অনুসরণ করতে চায় মুনতাহা। আরও একটা স্বপ্ন আছে তার। বলছিল, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর রাগবি দলের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’

সিদরাতুল মুনতাহা, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ