ভাগাভাগির এই তো সময়

নাহিদা খান
নাহিদা খান

হোস্টেল বন্ধের পর বাড়ি এসেছি আজ ২৩ দিন। যখন ফিরছিলাম, তখন সারা রাস্তা নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করছিলাম, পৃথিবীর এই অসুখের ক্রান্তিলগ্নে যত দিনই বাড়িতে থাকি না কেন সময়ের সদ্ব্যবহার করব।

যেহেতু বাড়িতে সচরাচর থাকা হয় না, মাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। সারা দিন পড়াশোনার চাপ, কলেজে ক্লাস, নানা অনুষ্ঠানের দৌড়ঝাঁপ করে কেমন যেন ঝিমিয়ে যাই। আর প্রিয় বইগুলো পড়তে হয় বাসে বসে কিংবা কাজের ফাঁকে। এই বন্ধে তাই প্রথম ১০ দিন ১০টি বই একবসায় পড়ে ফেললাম। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে সিনেমাও দেখে ফেললাম পাঁচটা। সারা দিনের তিন বেলা রান্নার অন্তত এক বেলার রান্নাটা করে মাকে একটু স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করি, সন্ধ্যাবেলা নতুন কোনো রেসিপি ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করি। আমার দাদাভাই দিনে ৭-৮ বার চা খান। আমাদের বংশের রীতিমতো সবাই চা-ভক্ত, এক আমি ছাড়া। তাই চায়ের দায়িত্বটা এখন আমার কাঁধে নিয়ে নিয়েছি, যেন মায়ের অন্তত মনে না হয় বাড়িতে থেকে তাঁকে বাড়তি চাপে ফেলছি।

ছোট বোনের পড়াশোনায় সাহায্য করছি। দুজন মিলে ঘরের কাজ ভাগ করে নিয়েছি। প্রতিদিনের প্রার্থনায় সৃষ্টিকর্তার কাছে এই কঠিন সময় থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করছি। এটা ঠিক যে আমাদের হাতে অনেক কিছুই নেই। কিন্তু যা আছে; যেমন ঘরে থাকা, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, এই সময়ে পরিবারের সঙ্গে থাকার এই সুবর্ণ সুযোগটাকে কাজে লাগানো, সেগুলো তো আমরা করতেই পারি। প্রিয়জনদের সুখ-দুঃখগুলোও একটু একটু ভাগ করে নিলেও এই হাসিমুখগুলো দেখে ব্যক্তিগত দুঃখ, কষ্ট, বিরক্তিবোধ হয়তো আর থাকবে না।

১৩.০৪.২০২০

নাহিদা খান,তৃতীয় বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ হবিগঞ্জ