আমাদের অপেক্ষা

আল সানি
আল সানি

বাবার হাত ধরে প্রথম যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম, সেদিনই কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছিলাম, ‘আমি আর স্কুলে যাব না।’ অথচ কদিন পর সেই স্কুলই আমার সবচেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছিল। ক্লাস সিক্সে যখন উঠলাম, কত বড় বড় ভাব হলো! প্রাথমিক পেরোনোর পর অনেক বন্ধুকেই আর উচ্চবিদ্যালয়ে একসঙ্গে পাইনি। নতুন বন্ধুদের নিয়ে আবার সবকিছু নতুনভাবেই শুরু করেছিলাম। তখন ভাবতাম হাইস্কুল জীবনটা কোনোরকম পার করে কলেজে উঠতে পারলেই জীবনে আর কী লাগে! কলেজে নাকি ক্লাস করলেও হয়, না করলেও হয়। অথচ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম অনুভব করলাম, জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি। এখানে সেই দিলখোলা বন্ধুত্ব নেই, স্কুলের সেই দুরন্তপনা খুঁজে পাই না, সবকিছু কেমন যেন ছকে বাঁধা।

অদ্ভুত হলেও সত্যি, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সেই ছেলেবেলার বাঁধনহারা দিনগুলো আবার পেতে শুরু করেছিলাম। এই একটা জায়গাতেই আগের বারোটা শ্রেণির সব কিছুই যেন বিদ্যমান। এখানে বন্ধুত্ব আছে, আড্ডা আছে, খেলাধুলা আছে, ভালোবাসার মানুষগুলো আছে, অনুভূতির তীব্রতা আছে, আছে নিজেকে মেলে ধরার সুবর্ণ সুযোগটাও। অথচ দেখতে দেখতে চারটা বছর প্রায় শেষ করে ফেললাম। আর একটা সেমিস্টার পরেই হওয়ার কথা ছিল সেই কাঙ্ক্ষিত ‘র​্যাগ ডে’।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে সমাবর্তন ও র​্যাগ ডে—এই দুইটা দিনের প্রতি হয়তো সবারই কমবেশি আকর্ষণ থাকে। আমাদের ৩৪তম   ব্যাচের প্রত্যেকের সেই আকর্ষণের মাত্রা অনেক বেশি ছিল, সেটা বুঝেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠান বা প্রতিযোগিতায় এই ব্যাচের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক উপস্থিতি দেখে। ক্যাম্পাসের ডজনখানেকের বেশি ক্লাবে ব্যাচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা সহসভাপতি আমাদের এই একটা ব্যাচ থেকে। 

করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ প্রায় তিন মাস। অনেক বন্ধুরই পরের সেমিস্টার চালিয়ে নেওয়ার মতো মানসিক বা আর্থিক সংগতি নেই। র​্যাগ ডে দূরের কথা, এক ছাদের নিচে সবার আবার দেখা হবে তো? যদি হয়, ঠিকই লাল, নীল, হলুদ কিংবা কান্নার রঙে পুরো ক্যাম্পাস রাঙিয়ে দেব। শুধু অপেক্ষা নতুন সকালের। 

ডিপার্টমেন্ট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি