ইংরেজিতে আর একটু দক্ষ হতে চান

ফাইল ছবি

ইংরেজির শিক্ষিকা হয়ে প্রথমেই যে অভিযোগ বা অভিমানটির সামনে পড়তে হয়, তা হলো, ‘আপু, আমি ইংরেজিতে মোটেও ভালো না! কিন্তু সারা জীবন ইংরেজি শিখেছি তো!’

আমার বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর বয়স ১৮ থেকে ৪০–এর মধ্যে। এ প্রাপ্তবয়স্ক খোকা–খুকুর দল উপরিউক্ত কথাটি যে সুরে বলে, তাতে মন একেবারে গলে যায় আমার।

ইংরেজি তো একটি বিদেশি ভাষামাত্র, এতই কি কঠিন? ছাত্রছাত্রীদের অহেতুক ভীতি দূর করতে ক্লাস এবং ক্লাসের বাইরে আমি ছোট ছোট কিছু কাজ করতে বলি তাদের। পড়ুন, এ কাজগুলো হয়তো আপনারও কাজে আসতে পারে। আবারও বলছি, এটি একটি বিদেশি ভাষা মনে রাখবেন, স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি ইংরেজিতে যতই ভালো হন না কেন, আপনি কখনোই ইংরেজি যে দেশের মাতৃভাষা, তাদের মতো হতে পারবেন না, তাই অযথা নকল করতে চাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার নিজের কণ্ঠ যেমন, সেভাবেই কথা বলুন, অহেতুক বিদেশি টান আনার দরকার নেই কথায়। আপনি চাইলে প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু শিখতে পারেন ইংরেজিতে, সেটা একটা নতুন শব্দ হলেও। প্রয়োজন কেবল ইচ্ছাশক্তি, আর কিছুই নয়।

কথা বলার অন্তত একজন ভালো সঙ্গী রাখুন

কথোপকথনের পরীক্ষা নিতে গিয়ে দেখেছি অনেক ছাত্রছাত্রীই অতিরিক্ত তোতলাতে শুরু করেন। কী মনে হয়? ইংরেজি বলতে গেলে কেন এমন হোঁচট খান আপনারা? ভালো একজন বন্ধু খুঁজে নিন, যিনি ইংরেজি কথা বলায় দক্ষ। ভালো বন্ধু এ জন্য বলছি, কারণ, কিছু ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অন্যের দুর্বলতা নিয়ে বাজেভাবে রসিকতা করার প্রবণতা থাকে। অনেক সময় বন্ধুর করা এমন রসিকতা অন্য পক্ষের সমস্ত আগ্রহে জল ঢেলে দেয়। আর বন্ধুকে ঠিকমতো বোঝাতে পারা মানে নিজের জানা টাকেও বেশ ভালোভাবে ঝালাই করে নেওয়া, সেটা জানেন? আপনার ইংরেজি কথা বলার ক্ষমতা যদি ভালো হয়, তবে আপনার দুর্বল বন্ধুটিকে শেখান, ঠকবেন না। আর ভুল করলে দয়া করে ধৈর্যহারা হবেন না, ভুল থেকেই অনেক কিছু শিখবেন আপনি।

দেখে শিখুন

ইংরেজি সিনেমা, খবর, গান ইত্যাদি দেখে শিখলে ধারণা পাওয়া যায় একটা শব্দ কি করে উচ্চারিত হয়। যদি কেবল দেখে বুঝতে না পারেন, তবে যা বলা হচ্ছে, সেটা যদি ভিডিওর নিচে স্ক্রল আকারে বা সাব–টাইটেল আকারে দেখা যায়, তবে বোঝা সহজ হয়।

উচ্চারণে গোলমাল নয়

আপনার যদি বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের আঞ্চলিক বাংলায় কথা বলার অভ্যাস থাকে (নোয়াখালী, বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ইত্যাদি) তবে সাবধান! বাংলার আঞ্চলিক টানকে আপনার ইংরেজির ভেতর টেনে এনে লবণ ছাড়া খিচুড়ি রান্না করে ফেলবেন না যেন।

পড়ুন, লিখুন, খেলুন

ইংরেজিতে প্রতিদিনের ঘটনাবলি লিখতে পারেন ডায়রিতে। প্রয়োজনে শিশুদের বই দিয়ে পড়ার অভ্যাস শুরু করুন। একটু ভাষাটা পোক্ত হলে বিভিন্ন পত্র–পত্রিকা (Reader’s Digest, Daily Sun, National Geographic) ইত্যাদি পড়ার চেষ্টা করতে পারেন। আবার শব্দভেদ, শব্দ চতুষ্ক, বিভিন্ন ধরনের শব্দ খোঁজার খেলা (Word Scapes, Scrabble) ইত্যাদি প্রতিদিন খেললে তা আপনার মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা বাড়াবে।

মুখস্থবিদ্যার গলায় দড়ি

একটা শব্দ বা যেকোনো কিছু কেবল মুখস্থ করে বসে থাকবেন না। এক শব্দের হাজারটা অর্থ হতে পারে, নিজে নিজে বাক্যে শব্দের প্রয়োগ শিখুন, কাউকে দিয়ে দেখিয়ে নিন। নতুন শেখা শব্দগুলো নিজের রচনায় প্রয়োগ করুন।

ফাইল ছবি

ধর্মেও সম্ভব

যারা গান বা সিনেমা পছন্দ করেন না, তারা পবিত্র কোরআন/গীতা/ত্রিপিটক ইত্যাদির ইংরেজি অনুবাদ পড়তে বা শুনতে পারেন, আপনার ধর্মচর্চা, ভাষাচর্চা দু–ই হয়ে যাবে।

সবশেষে বলব, আপনি নিজেকে যতই দুর্বল ছাত্র ভাবুন, শুধু নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে সবল হয়ে উঠতে পারেন আপনি। মনে রাখবেন, অসম্ভব বলে, আমি সম্ভব (impossible says: I’m possible). শেখার মজাকে উপভোগ করে শিখতে পারলে, আপনার পক্ষে সব সম্ভব। শুভ হোক শিক্ষা।

*লেখক: আইইএলটিএস শিক্ষক, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র