ঈশিকা আগারওয়ালের হার্ভার্ডে পড়ার গল্প

ফাইল ছবি

ঈশিকা আগারওয়াল পড়াশোনা করছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। কীভাবে পড়াশোনা, বিদেশে ভর্তি, এসব জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের জন্য নানা পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন :

আপনি যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় পড়াশোনা করছেন?

ঈশিকা আগারওয়াল: আমি এখন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ফলিত গণিতে পড়ছি, অর্থনীতির ওপর ফোকাস রেখে। সেই সঙ্গে উচ্চতর স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন :

বর্তমানে কোনো বিষয়ে পড়ছেন এবং কেন?

ঈশিকা আগারওয়াল: আমি ফলিত গণিতে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি; কারণ, হার্ভার্ডে পড়ানো পরিমাণগত বিষয়গুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে নমনীয়। তাই এটি আমাকে কম্পিউটার সায়েন্স, পরিসংখ্যান, বিশুদ্ধ গণিত, অর্থনীতি এবং আরও অনেক আকর্ষণীয় কোর্স করার স্বাধীনতা দেয়। পড়াশোনার প্রধান বিষয়টিতে আমি যে জিনিসটি পছন্দ করি, তা হলো—অর্থনীতি আমাকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যার বিস্তৃত চিত্রটি সম্যকভাবে বুঝতে সাহায্য করে, আর ফলিত গণিত সেগুলো সমাধানের উপায় দেয়। প্রধান বিষয়ের পাশাপাশি স্প্যানিশ ভাষায় উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে যাচ্ছি; কারণ, তা আমাকে কেবল অসাধারণ ভাষাটি বলতে শেখায় না; বরং এই ভাষায় কথা বলা বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে, যা ছাঁচে ঢালা মনোভাব কমিয়ে আনতে সহায়ক।

প্রশ্ন :

এডুকেশন ইউএসএ বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রথম কীভাবে জানলেন?

ঈশিকা আগারওয়াল: আমি প্রথম এডুকেশন ইউএসএ সম্পর্কে জানতে পারি যখন সেখানকার একজন উপদেষ্টা, মুশফিক হাসান, দিনাজপুরে একটি অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের পড়াশোনার সুযোগ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠান আমার জন্য এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। কারণ, আমি ভাবতাম, এসব সুযোগ কেবল ঢাকার মতো নগরীতে থাকা শিক্ষার্থীরাই পান।

প্রশ্ন :

এডুকেশনইউএসএর কোন কোন তথ্য আপনার শিক্ষাজীবনের বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে?

ঈশিকা আগারওয়াল: যদিও দিনাজপুরে কোনো এডুকেশন ইউএসএ সেন্টার নেই, তবে ই–মেইলে এডুকেশন ইউএসএর উপদেষ্টাদের সব সময় পাওয়া যেত। তাদের কাছ থেকে আমার সামগ্রিক আবেদনের জন্য পেশাদারি পরামর্শ পেয়ে এসেছি, আর কলেজের আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও জানতে তাদের ব্যাপক অনলাইন সুবিধা ব্যবহার করেছি।

প্রশ্ন :

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি ছাত্র এবং তরুণ পেশাজীবীদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ ও উৎসাহমূলক বক্তব্য আছে?

ঈশিকা আগারওয়াল: সম্ভাব্য বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য আমি পরামর্শ দেব, সাহায্যের জন্য প্রাক্তন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগে লজ্জা করবেন না। আজকের যুগে কলেজের ওয়েবসাইট, ইউটিউব, ফেসবুক গ্রুপ ও বই থেকে প্রচুর রিসোর্সও তথ্য পাওয়া যায়। তাই দয়া করে, কলেজ এবং আবেদন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার জন্য আন্তরিকভাবে কিছুটা সময় ব্যয় করুন। কারণ, মার্কিন পাঠ্যক্রম এবং সেখানকার কলেজের আবেদনপ্রক্রিয়া বাংলাদেশের সাধারণ পাঠ্যক্রম এবং এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপ্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই ভিন্ন।

যদি এমন কোনো স্কুল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেন, যেখানে পড়াশোনার বাইরে বাড়তি কিছু করার যথেষ্ট সুযোগ নেই, তবু উদ্যোগ নিতে ভয় পাবেন না। যেমন আগ্রহের কোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে নিজেই একটি ক্লাব গঠন করা। যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলো এমন সব শিক্ষার্থীকে নিতে চায়, যাঁরা নিজ সমাজে অগ্রণী। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য দরকার হলো তাঁদের সম্ভাবনার পুরোটা অন্বেষণ করা এবং তাঁরা নিজেদের, পরিবার ও সমাজের ওপর যে প্রভাব রাখতে পারেন, তার স্বীকৃতি পাওয়া। সমাজে জেন্ডার ভূমিকা, তৎসংশ্লিষ্ট প্রত্যাশা আর যত প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন, বিশ্বমানের কলেজ শিক্ষা ও অন্যান্য মেয়ের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠার জন্য হলেও সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো ভাঙা জরুরি।

এর বাইরে কলেজ প্রবন্ধ এবং বিশেষ সংখ্যার জন্য লেখার গুরুত্ব যে কতটা, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না; যদিও দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ শিক্ষার্থী এর তাৎপর্য বুঝতে পারেন না। এটির ওপর শতভাগ দখল এবং আপনার লেখালেখি একটি কলেজে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। ব্যাপারটি এমন যে একটি আস্ত ফুটবল মাঠে আপনি একা, কিন্তু গোল দিতে পারছেন না, যা খুবই দুঃখজনক।

প্রশ্ন :

আপনার অভিজ্ঞতায় উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার বিশেষ সুবিধাগুলো কী?

ঈশিকা আগারওয়াল: আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি কলেজে পড়ে আমি বিভিন্ন জাতিগত প্রেক্ষাপট, জাতি, জাতীয়তা এবং মন-মানসিকতার শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সামাজিক অন্যায় ও বর্ণবাদ সম্পর্কে নিছক পাঠ্যবই ও কোর্স থেকে শিখিনি, বন্ধুদের শেয়ার করা অভিজ্ঞতা থেকেও সরাসরি জেনেছি। এটি আমাকে বিশাল এক একাডেমিক ক্ষেত্রে বিচরণ এবং আমার আগ্রহের বিষয়গুলোকে একটি নতুন মেজর (কোর্সে) একত্র করার সুযোগ দিয়েছে।

সবশেষে, এখানে পড়াশোনা আমাকে স্বস্তির ঘেরাটোপ ঠেলে বেরিয়ে আসতে এবং স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে; কখনো কখনো জীবনের বিচক্ষণতম সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেসব ব্যর্থতা থেকে শিখে সেখান থেকে বেড়ে উঠেছি।