বুয়েট থেকে এমআইটি
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পিএইচডি করতে যাচ্ছেন বুয়েটের দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থী—শাশ্বত সৌম্য ও মাহমুদুল ইসলাম। কেমন করে এই সুযোগ পেলেন, এমআইটিতে আবেদনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় বেশি, জেনে নেওয়া যাক।
ছোটবেলায় ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীতের তালিম নেওয়ার সময় শাশ্বত সৌম্য ভাবেননি বিজ্ঞানের সঙ্গে তাঁর এতটা সখ্য হবে। একটু যখন বড় হলেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহ তৈরি হলো। সেই আগ্রহ আর অধ্যবসায় তাঁকে পৌঁছে দেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। নিজেদের ব্যাচে তৃতীয় হয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। এখন বুয়েটেই প্রভাষক হিসেবে আছেন।
মাহমুদুল ইসলামের গল্পটা অবশ্য একটু অন্য রকম। পড়াশোনাটা যে তাঁকে দিয়ে হবে—উপলব্ধি করেন অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ার পর। এর পরপরই পড়ালেখা নিয়ে ‘সিরিয়াস’ হতে শুরু করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ২৬তম হয়ে তাঁর স্থান হয় যন্ত্রকৌশল বিভাগে। প্রথম হয়েই স্নাতক শেষ করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে শুরু থেকে দুজনেরই গবেষণায় আগ্রহ ছিল। তাই স্নাতক পর্যায় থেকেই গবেষণায় যুক্ত হয়েছিলেন তাঁরা। যদিও দুজনই জানালেন, এমআইটির মতো প্রতিষ্ঠানে শুধু একাডেমিক রেজাল্ট বা গবেষণা এককভাবে বড় ভূমিকা রাখতে পারে না। সৌম্য বললেন, ‘একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি গবেষণার অভিজ্ঞতা, স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি), লেটার অব রেকমেন্ডেশন, ভাষার দক্ষতা—সবই সমান গুরুত্ব পায়।’
স্নাতক পর্যায়ে গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম, সুযোগও পর্যাপ্ত নেই। সেই কঠিন কাজটা কীভাবে করলেন বুয়েটের দুই ছাত্র। মাহমুদুল বলেন, ‘দ্বিতীয় বর্ষে যখন পড়ি, হঠাৎ কেন যেন মনে হলে গবেষণা করতে হবে। তখন থেকে আমার বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিছুদিন পর একটা গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাই। ওই বছরই বুয়েটের একটা সম্মেলনে আমি প্রবন্ধ উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছিলাম। পরে তৃতীয় বর্ষ থেকে আবার বিভাগের অ্যালামনাইদের সঙ্গে কাজ করা শুরু করি। এই সুযোগটাই মূলত আমাকে পথ দেখায়। চতুর্থ বর্ষের মধ্যে আমার নিজের নামে একটা গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়ে যায়।’
করোনা মহামারির লম্বা ছুটি দুজনের জন্যই আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল, যা তাঁরা পুরোদমে কাজে লাগিয়েছেন গবেষণায় মনোনিবেশ করে। ভাষার দক্ষতা বাড়াতেও সময় দিয়েছেন তাঁরা। দুজনের গবেষণার ক্ষেত্রই ব্যতিক্রমী। শাশ্বত সৌম্যের আগ্রহের ক্ষেত্র যেমন বায়োইনফরমেটিকস বা কম্পিউটেশনাল বায়োলজি। এমআইটির কম্পিউটার ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের অধীনে জিনোমিকস নিয়ে গবেষণা করবেন তিনি। আবার মাহমুদুলের গবেষণার আগ্রহ ন্যানোমেকানিকস নিয়ে। বুয়েটে যন্ত্রকৌশলে পড়লেও তিনি এমআইটিতে গবেষণা করবেন ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।
বুয়েটের গবেষণাবান্ধব পরিবেশ তাঁদেরকে সহায়তা করেছে, বললেন দুই তরুণই। মাহমুদুলের বক্তব্য, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের একটি বড় ভূমিকা ছিল। আমিও যেহেতু একটা ভালো জায়গায় সুযোগ পেয়েছি, তাই ভবিষ্যতে চেষ্টা করব, জুনিয়রদের সহযোগিতা করতে। এভাবে আমরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়াই, তাহলে গবেষণা ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থান আরও অনেক ভালো হতে পারে।’
পছন্দের কাজের পেছনেই সামনের সময়টা কাটবে, ভেবে দুজনই খুশি। তাঁদের মতো আরও যাঁরা গবেষণায় আগ্রহী, তাঁদের জন্য কী পরামর্শ? সৌম্য বলেন, ‘গবেষণা করতে চাইলে বেশি বেশি পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যখন বেশি পড়াশোনা করবেন, আপনার সেক্টরের সমসাময়িক গবেষণাগুলো নিয়ে জানবেন, তখনই আসলে নতুন নতুন আইডিয়া আসবে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, নিজের কাজের প্রতি সিরিয়াস থাকা। হয়তো এসব ক্ষেত্রে শিক্ষক বা সিনিয়রদের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, কিন্তু নিজের কাজটা করতে হবে নিজেরই।’
এসবের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাহসী হওয়ার পরামর্শ দেন মাহমুদুল। তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়—যেকোনো কাজে আমরা সাহায্য নিতে ভয় পাই। আমি আমার উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, যদি সিনিয়রদের কাছে গিয়ে সাহস করে না বলতাম, হয়তো আমাকে দিয়ে হতো না। তাই কে কী বলবে, প্রত্যাশিত সাহায্য পাব কি পাব না, এসব না ভেবে বলতে হবে। তাহলে ইতিবাচক একটি ফল আসার সম্ভাবনা থাকে।’