ভিন্নরূপে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ফাইল ছবি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৫ অতিবাহিত করে ১৬ বছরে পদার্পণ করছে। এটি ২০০৬ সালের ৯ মে প্রতিষ্ঠিত হয়; যদিও এটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কয়েক বছর আগে নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি মূলত বাংলাদেশের প্রথম সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় আইন এটিকে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

১৫ একর জমি নিয়ে শুরু করে বর্তমানে ৫৭ একর জমিতে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা অনুযায়ী এই পরিমাণ আয়তন বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই বর্তমান উপাচার্য সৌমিত্র শেখর জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটা একটি ইতিবাচক চিন্তা। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীন ২৪টি বিভাগে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

বর্তমানে নতুন উপাচার্য কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় জিরো পয়েন্টে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতিরোধক স্থাপন। এটা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছিল। এখানে আমাদের কয়েক শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন, যা খুবই দুঃখজনক। অতীতের উপাচার্যরা গতিরোধক স্থাপনের বিষয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্যের কঠোর উদ্যোগে এটা বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের জন্য একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা এবং সেই অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণকে স্বাগত জানাই। এ পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করতে পারলে সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাসে পরিচিতি লাভ করবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা অনেক উপকৃত হবেন। চাকরির বাজারে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এটা একটি যুগান্তকারী ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলাসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক নতুন মাইলফলক। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নানা বাধায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমান উপাচার্য যোগদানের চার মাসের মধ্যে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাই তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের একটি দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দীর্ঘদিন ধরেই সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের দাবি করে আসছিলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এই সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছি, যা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কয়েক দিনে মনে হয়েছে, বর্তমান উপাচার্যের চিন্তাভাবনা ইতিবাচক। তবে তাঁকে বাকি সময় দক্ষভাবে প্রশাসনকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই আমাদের উচিত হবে তাঁকে সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। যার জন্য আমাদের সবাইকে যার যার দায়িত্বটুকু সম্পূর্ণভাবে পালন করা উচিত। শিক্ষকদের উচিত হবে গবেষণানির্ভর কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি প্রবেশপথ হবে। শুনেছি, একটির নাম হবে ‘জয় বাংলা’ এবং অন্যটি ‘বঙ্গবন্ধু’। এটি যদি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে অবশ্যই আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়াশা উৎসব হয়, যা একমাত্র এখানে এই সংস্কৃতির চর্চা হয়। যার মাধ্যমে আমাদের দেশ বা জাতির সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। আশা করি, যত দিন বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তত দিন এই উৎসব উদ্‌যাপন করবেন আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে সবুজায়ন, ফুলের বাগান হবে। সবুজে সবুজে আমাদের হৃদয় ভরে উঠুক নজরুল প্রাঙ্গণে।

উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকেই সৌমিত্র শেখর বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মার্ট ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। আমরাও এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। শিক্ষা, গবেষণা, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত, শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস করি।

বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন আধুনিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন করে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে, বর্তমান উপাচার্য সেই উদ্দেশ্যে কাজ করবেন—এটাই আমাদের কামনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে, তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখা সম্ভব। সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টা এবং নিয়মতান্ত্রিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় কবির প্রেম ও চেতনায় এগিয়ে যাক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন নতুন ফুলে ভরে উঠুক এবং প্রতিটি মানুষ ফুলের মতো তাদের কর্মজীবন পরিচালনা করুক—এটাই হোক আজকের ভাবনা।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ