প্রতিবন্ধীবান্ধব শিক্ষা নিয়ে আলোচনা, ‘ঢাকা ঘোষণা’য় শেষ আইসিইভিআই পশ্চিম এশীয় সম্মেলন

ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দুই দিনব্যাপী West Asian Regional Conference of International Council for Education of People with Visual Impairment (ICEVI)–এর পশ্চিম এশীয় আঞ্চলিক সম্মেলন। দুই দিনের (গত ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি) সম্মেলেনের সমাপ্তি হয় ‘ঢাকা ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্মানিত আঞ্চলিক প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী ও অংশীদারেরা প্রতিবন্ধীবান্ধব শিক্ষাবিষয়ক জটিল সমস্যাগুলোর ওপর আলোচনা করেন। ঢাকা ঘোষণায় মানসম্পন্ন শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বাধাগুলো তুলে ধরা হয়েছে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব শিক্ষার প্রসারে সমস্যা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিশদভাবে পর্যালোচনার জন্য পুরো অঞ্চল থেকে প্রতিনিধি, অধিকারকর্মী ও অংশীজনেরা একত্র হন। এবার ২০০ জন অংশগ্রহণকারী সম্মেলনে সরাসরি যোগ দেন। এ ছাড়া পুরো অঞ্চল থেকে আরও ২৫০ জন অংশগ্রহণকারী অনলাইনে সব আলোচনা সভাগুলোয় যোগ দেন। এবার ‘শিক্ষায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করে যাওয়া যেন বাদ পড়ে না কেউ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সম্মেলনটি ঢাকায় যৌথভাবে আয়োজন করেছে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) এবং মানসম্পন্ন ও একীভূত শিক্ষার প্রসারে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের ২১টি এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত কোয়ালিটি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন ফোরাম। আইসিইভিআইর পশ্চিম এশীয় অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব অঞ্চলের মোট ২৫টি দেশ মিলিয়ে গঠিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু এবং যুবকদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার অধিকার সমুন্নত রাখার অভিপ্রায়ে একটি অংশীদারি অঙ্গীকার হিসেবে ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আইসিইভিআই। ‘সেই অঙ্গীকারে আজও আমরা অনড় রয়েছি এবং তারই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্যে’, মন্তব্য করেছেন আইসিইভিআই-এর গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সেস জেন্টল। সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এই বাদ পড়বে না কেউ মূলনীতি অবলম্বনের ফলে আমাদের সবাইকে দৃষ্টি, ক্ষীণদৃষ্টি, শ্রবণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতাসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পরিবারের প্রতি আরও বেশি সহমর্মী হতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদের আলোকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার অধিকার প্রাপ্তিতে সমাজে বিদ্যমান বাধা, অসমতা ও বৈষম্য দূর করতে আমাদের সবাইকে আরও সোচ্চার হতে হবে।’

ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত আইসিইভিআই পশ্চিম এশীয় আঞ্চলিক সম্মেলন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও অনুশীলনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে, বিশেষ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা এবং শ্রবণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে আলোচনা, সহযোগিতা ও জ্ঞান বিনিময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সম্মেলনটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অভিগম্যতা ও সুযোগ বাড়ানোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সম্মেলনটি উদ্ভাবনী কৌশল, প্রযুক্তির অগ্রগতি ও একীভূত শিক্ষা অনুশীলনের প্রচারের লক্ষ্যে নীতি কাঠামো অন্বেষণ করবে বলেও আশা করা যায়। সম্মেলনে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা মোকাবিলায় সহায়ক প্রযুক্তি, সহজ যোগাযোগমাধ্যম ও শেখার কৌশলের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি নীতি ও আইনিব্যবস্থা বিষয়েও আলোচনা উঠে এসেছে।

আইসিইভিআই বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, অংশীদারদের একত্র হওয়া, অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একে অপরকে জানা এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এ সম্মেলন একটি অনন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে।

সম্মেলনের মূল বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশের প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি মনসুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারসংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির প্রথম মেয়াদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ কমিটির সভাপতি গারট্রুড ওফোরিওয়া ফেফোমের ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার এবং শিক্ষার ওপর বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে একটি বিশেষ ভিডিও বার্তা আলোচনাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান, শিক্ষাবিদ ও ক্যাম্পেইনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সাইটসেভার্স বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত, সেন্স ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া-এর নির্বাহী পরিচালক অখিল পাল, সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খানসহ অন্য ব্যক্তিরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি