চবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খাবারের বাড়তি দাম প্রত্যাহার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। শুক্রবার রাতে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজ শনিবার রাত থেকে আগের দামেই হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবার বিক্রি হবে। তবে শুক্রবার সাহ্‌রিতে ১০ টাকা বাড়তি দিয়েই শিক্ষার্থীদের খাবার খেতে হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাত সাড়ে দশটায় অনলাইনে প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে জরুরি সভায় বসেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। এতে হল প্রাধ্যক্ষ ছাড়াও সহউপাচার্য বেনু কুমার দে, প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে রাত সাড়ে ১২টায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার।

নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দাম আগের মতো রাখা হয়েছে। তবে এখনই খাবারে সরাসরি ভর্তুকির বিষয়টি আসছে না। শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণ টাকা খাবারের জন্য পরিশোধ করেন, তার ভেতরেই খাবার পরিবেশন করা হবে। ঈদের ছুটি শেষে সব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরলে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে পুনরায় দাম পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মূল্যতালিকা পুনর্নির্ধারণ করেছিল কর্তৃপক্ষ। মূল্য নির্ধারণের আগে প্রতি বেলা খাবারের মূল্য ছিল ২৫-৩০ টাকা, নতুন মূল্যে সেটি ৩৫-৪০ টাকা করা হয়েছিল। অন্যদিকে সাহ্‌রির খাবারের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছিল।

মূল্যবৃদ্ধির পরপর শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন। ফেসবুকে দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে অনেকেই পোস্ট দেন। সর্বশেষ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় বাড়তি মূল্য প্রত্যাহার, খাবারে ভর্তুকি বাড়ানোসহ চার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। এরপর প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে তাঁরা অবস্থান ত্যাগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১১টি আবাসিক হল আছে। এর মধ্যে সাতটি ছাত্রদের ও চারটি ছাত্রীদের। এসব হলে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছাত্র ও চার হাজার ছাত্রী রয়েছেন। ছেলেদের সাতটি হলের মধ্যে মাস্টারদা সূর্য সেন হল ছাড়া অন্যগুলোতে ডাইনিং রয়েছে। ডাইনিংয়ে খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, ডাল, মাছ বা মাংস এবং সবজি বা ভর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য কর্তৃপক্ষ সরাসরি কোনো ভর্তুকি দেয় না। তবে ডাইনিংয়ের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কর্মচারীদের বেতন কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে। সরাসরি খাবারে কোনো টাকা খরচ করে না। এ ছাড়া পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে হল প্রাধ্যক্ষদের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও নেই।

ডাইনিংয়ে খাবারের মান নিয়ে বরাবর অসন্তোষ থাকে শিক্ষার্থীদের। গত বছর আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচবার খাবারের মান বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

অবশ্য ডাইনিং পরিচালকদের দাবি বাজারে নিত্যপণ্যর দাম বাড়ায় খাবারের মান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের ডাইনিং পরিচালক মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ টাকার মধ্যে ভাত, ডাল, মাছ/মাংস, সবজি/ডাল শিক্ষার্থীদের পাতে দিতে হয়। বর্তমান বাজার তুলনা করলে এ দামে এত কিছু দেওয়া এক প্রকারের অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে নিম্ন মানের খাবার দিতে হয়। কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দিলে অথবা দাম বাড়ালে তাঁরা ভালো মানের খাবার দিতে পারবেন।

তবে দাম বৃদ্ধি খাবারের মান বাড়ানোর স্থায়ী কোনো সমাধান নয় বলে মনে করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খাবারের মান ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই বরাদ্দ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার শিক্ষার্থীদের। অথচ তাঁদের খাবার, বাসস্থান, ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনই নজর দেয় না। নতুন অবকাঠামো, প্রকল্প, নিয়োগসহ যেসব বিষয়ে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেসব বিষয়ে প্রশাসন নজর দেয়।