ঢাকা কমার্স কলেজ: বিজ্ঞানেও দুর্দান্ত ওরা

ছবি: সংগৃহীত

বাড়ির কাছে এত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকতেও মেয়েটিকে ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে দূরে কোথাও হয়তো পড়তে যেতে হবে। এমনই আক্ষেপ ছিল মিরপুর প্লট এরিয়ার বাসিন্দা শাহেলা খাতুনের। কিন্তু এখন আর তাঁকে সেই আক্ষেপ তাড়া করে না। কারণ, তিনি যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন, ব্যবসায় শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী সেই ঢাকা কমার্স কলেজে এখন বিজ্ঞান বিভাগও রয়েছে।

২০১৯-২০ সেশনে দেশসেরা এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়। শাহেলার মতো এমন অনেকেরই বিজ্ঞানে আগ্রহী সন্তানের বাড়ির পাশের বৃহদাকার ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ এই কলেজে পড়তে না পারার আক্ষেপ ছিল প্রচুর, যা এখন দূর হয়েছে। কমার্সের পাশাপাশি বিজ্ঞানে আগ্রহী ভালো শিক্ষার্থীরা এখন কলেজটিতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে, যা ২০১৯-২০ এর আগে সম্ভব ছিল না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম বোর্ড পরীক্ষায়ই দুর্দান্ত ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শুধু প্রথমবার বলেই নয়, এ পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় বিজ্ঞান বিভাগের তিনটি বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের অভিজ্ঞতা এককথায় অভাবনীয়!

আরও পড়ুন

কমার্স কলেজে বিজ্ঞানের ব্যাপারটি প্রথমে কিছুটা বেমানান লাগলেও ছাত্র ভর্তির পর দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখর ক্যাম্পাসে বরং মনে হলো এত দিনে শূন্যতা পূরণ হলো। ‘কমার্স বিশেষায়িত’ কলেজ হলেও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বোর্ড অনুমোদিত ১ হাজার ২০০ আসন পূর্ণ হয়ে যায়। ব্যবসায় শিক্ষার মতো বিজ্ঞানেও কলেজটি তার সুখ্যাতি ধরে রাখবে, এমন বিশ্বাস থেকেই এই সাড়া পায় প্রতিষ্ঠানটি; যার প্রতিফলন ঘটে ২০২১-এ প্রকাশিত এই বিভাগের উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম ফলাফলে। এই শাখা থেকে ১ হাজার ৮৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১ হাজার ৮১ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পান ৬৬৮ জন। যেখানে ভর্তির সময় জিপিএ-৫ ছিল মাত্র ৮০ জনের। অর্থাৎ প্রথম ফলাফলেই বোঝা গেল, অভিভাবকদের আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ন হয়নি এতটুকুও। তাই এত দিন কমার্স পড়ার কথা ভাবলে সবার আগে যেমন ঢাকা কমার্স কলেজের নাম উচ্চারিত হতো, বিজ্ঞানের বেলায়ও ভবিষ্যতে তা-ই ঘটবে।

ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞান বিভাগ উন্নয়নের ধারা শুধু ধরে রাখাই নয়, বছরব্যাপী বহুগুণে বৃদ্ধি করে চলেছে; যার প্রমাণ ২০২২-এর ফলাফল। এই শাখা থেকে ১ হাজার ৫২৭ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে পাস করেন ১ হাজার ৫২১ জন, তাঁদের মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করেন ১ হাজার ১৫৯ জন, পাসের হার ৯৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। ভর্তির সময় এই শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৪১ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছিল। ৯১৮ জনই কলেজটির আন্তরিক তত্ত্বাবধানে জিপিএ-৫ অর্জন করেন এবং উন্নয়নের হার প্রায় ১০০ শতাংশ। ২০২৩ সালেও বিজ্ঞান বিভাগ ভালো ফল অর্জন করে।

আরও পড়ুন

কলেজ ভবনের সঙ্গেই শিক্ষকদের আধুনিক আবাসনের সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানে দেশসেরা শিক্ষকের অংশগ্রহণ যেমন রয়েছে, তেমনি বৃহত্তর মিরপুরে চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন সবুজ-শ্যামল প্রায় ১১ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাপক আকারে অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস। যেখানে সুপরিসর স্মার্ট লাইব্রেরি, সেমিনার, ইকো বিজ্ঞানাগার, আইটি ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ যুগোপযোগী জ্ঞানাহরণের সব আয়োজন তথা সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান।

ছবি: সংগৃহীত

কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু পুঁথিগত শিক্ষায় নয়, গণিত ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডসহ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও টিমওয়ার্ক তথা গ্রুপ ডিসকাশনের মাধ্যমে বাস্তবভিত্তিক সৃজনশীল শিক্ষায় সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়।’

কলেজটির অধ্যক্ষ ড. মো. আবু মাসুদ বলেন, ‘বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ভালো ফল অর্জনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে নিয়মিত অধ্যবসায়ে অভ্যস্ততা ও নিয়ম–শৃঙ্খলার ব্যাপারে যত্নশীল হতে উদ্বুদ্ধ করি আমরা। বিশেষ করে শুধু ভালো ফল অর্জনই শেষ নয়, দেশসেরা ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের দুর্লভ সুযোগ ও সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে আলোকিত মানুষ তৈরির সুমহান অংশগ্রহণের দীক্ষাও আমরা এখানে দিয়ে থাকি।’

ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ১৯৯১-২০০২ সাল পর্যন্ত কলেজটির গড় পাসের হার ছিল ৯৯ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং জিপিএ পদ্ধতিতে ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২১ বছরে কলেজের গড় পাসের হার প্রায় ১০০ শতাংশ। কলেজটির এই খ্যাতি তথা সাফল্যের স্বীকৃতি যেমনি সেরা ফলাফল তথা ক্যারিয়ার সাফল্যে, তেমনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবারের সেরা কলেজের স্বীকৃতিতেও বারবার উঠে আসছে। ঢাকা কমার্স কলেজ ১৯৯৬ ও ২০০২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জনসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র‍্যাঙ্কিং ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮-তে জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারি কলেজ নির্বাচিত হয়েছে। শুধু সেরা কলেজই নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্‌-মডেল কলেজ প্রকল্পের পাঁচটি কলেজের মধ্যেও প্রথম স্থান অর্জন করে এই কলেজ। কলেজটিতে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বহুবিধ শিক্ষামূলক কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রুটিনমাফিক নিয়মিত পরিচালিত হয়। বিজ্ঞাপন বার্তা

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন