বাংলাদেশ স্কুল মাসকাট বাংলাদেশিদের প্রত্যাশা পূরণ করুক
বাংলাদেশ স্কুল মাসকাটের পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিভাবকদের ভোটাভুটিতে জয়লাভ করেছেন পাঁচজন। নতুন কমিটির কাছে অভিভাবকদের প্রত্যাশা অনেক।
বাংলাদেশি কমিউনিটির শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আমিন আহমেদ চৌধুরীর (বীর বিক্রম) পৃষ্ঠপোষকতা ও বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সহযোগিতা ও রেমিট্যান্স–যোদ্ধাদের আর্থিক অনুদানে ও ওমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও অনুমোদনে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ স্কুল মাসকাট। ১৯৯৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ওই বছরের ৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল। ব্রিটিশ নাগরিক রবার্ট কুসওয়ার্থকে প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়েছিল। ওমান সালতানাতের কমিউনিটি স্কুলগুলোর নীতিমালা ও নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নতুন ভবন তৈরি করতে প্রবাসী রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা ১০ বছর অনুদান দেন বাংলাদেশ দূতাবাসকে। প্রতিটি পাসপোর্ট সেবা থেকে ৫ রিয়াল করে প্রবাসীরা দুবার ১০ রিয়াল অনুদান করেন। ১০ বছর দূতাবাসের বিভিন্ন সেবা থেকে শতাংশ অনুযায়ী রেমিট্যান্স–যোদ্ধাদের কাছ থেকে এ অর্থ নেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালে ওমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেন মরহুম আমিন আহমেদ চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ও বাংলাদেশ কমিউনিটির ও বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আমিন আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে উঠে স্কুলটি।
প্রথম অধ্যক্ষ রবার্ট কুসওয়ার্থ। এরপর গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) হাজী মহিউদ্দিন আলমগীর, এস এ এস বেগম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কায়সার আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নুরুজ্জামান, লে. কর্নেল (অব.) মাহমুদ উল আলম, মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন আহমেদ (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ), ফারজানা করিম, জেমস এডওয়ার্ড হানিবল, সামন্তি আথালগে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) ও রিয়ার এডমিরাল (অব.) প্রদীপ রত্ননায়েক অধ্যক্ষ হন। তিনি ২০২৫ সালের আগষ্ট মাসে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশি অধ্যক্ষ নিয়োগ বন্ধ।
স্কুলটি পরিচালিত হয় ওমানের শিক্ষা মন্ত্রাণলয়ের বিধিমালা অনুযায়ী ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা ও অভিভাবকদের সরাসরি ভোটে দুই বছরের জন্য নির্বাচিত পাঁচজন প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের তিনজন প্রতিনিধি (একজন দূতাবাসের প্রতিনিধি ও দুজন বাংলাদেশি উচ্চ শিক্ষিত প্রবাসী) মাধ্যমে। স্কুলের অধ্যক্ষ পদাধিকার বলে কমিটির সদস্যসচিব কাজ করেন। পাঁচজন নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি থেকে পাঁচজনের ভোটে একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। প্রতি দুই বছরের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবছর নিরীক্ষণ (অডিট) করার কথা সংবিধানে উল্লেখ করা আছে।
মাসকাটে অনেক ভালো স্কুল থাকা সত্ত্বেও স্কুলটিকে বেছে নেন ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিরা। মাসকাটের অন্য আন্তর্জাতিক স্কুলের টিউশন ফির তুলনায় বাংলাদেশ স্কুলের ফি অনেক কম। প্রায় ১০০০টি পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের এ স্কুল পড়াশোনা করায়। অভিভাবকদের ধারণা, উন্নত স্কুলে পাঠাতে খরচ অনেক। কিছু উচ্চবিত্ত অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের বিশাল অঙ্কের টিউশন ফি দিয়ে ভালো মানের স্কুলে পড়াশোনা করান। তাঁদের ধারণা, সেরা স্কুলে উন্নত মানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশ স্কুলের তিন গুণ বেশি। তারপরও বাংলাদেশ স্কুল শিক্ষার্থীদের যোগ্য, আত্মবিশ্বাসী এবং সুদক্ষ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অভিজ্ঞ ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।
শিক্ষা বিশ্ব পরিবর্তন এবং ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এই কারণেই অনেক মা–বাবা তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে এতে বিনিয়োগ করেন। একসময় ওমানে বাংলাদেশ স্কুলের পড়াশোনার মান ৪ নম্বর র্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থান ছিল। বর্তমানে এর মান অনেকটা খারাপ হয়েছে।
কিন্তু সেরা স্কুল হওয়ার অর্থ আসলে কী? অভিভাবকেরা সন্তানের জন্য একটি স্কুলকে সঠিক পছন্দ করে কেন? আমি তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে চাই।
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে সমস্যা ও স্কুলের ছেলেমেয়েদের আচরণসহ বহু সমস্যায় জর্জরিত। ২০২৩–২৪ সালের স্কুলের অডিট সময়মতো করা হয়নি। বিভিন্ন খাতে অপচয় হচ্ছে। সঠিক জবাবদিহি নেই।
১. কঠোর পাঠ্যক্রম
একটি স্কুলের পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার সময় কী জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে পারে, তা নির্ধারণ করে। এই কারণেই স্কুল নির্বাচন করার সময়, পাঠ্যক্রমটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। সেরা স্কুল একটি কঠোর, ব্যাপক এবং আপডেটেড পাঠ্যক্রম ব্যবহার করে, যা অধ্যয়নের সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে স্পর্শ করে। এটির লক্ষ্য হবে একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষার্থীদের স্কুলের ভেতরে এবং বাইরে উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশ করা।
২. বিভিন্ন আগ্রহের জন্য পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যকলাপ
শিক্ষা যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গায় হতে পারে, কার্যকলাপ যা–ই হোক না কেন। এটি কেবল শ্রেণিকক্ষের চার কোণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। স্কুলে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যকলাপ তৈরি করে বাচ্চাদের অন্বেষণ, আবিষ্কার এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরও সুযোগ প্রদান করে। তারা স্কাউটিং ও গার্লস গাইড প্রশিক্ষণ, খেলাধুলা, সংগীত, সাহিত্য চর্চা ও শিল্পকলা, পারফরম্যান্স এবং আরও অনেক কিছুর মতো সব আগ্রহের জন্য সব ধরনের প্রোগ্রাম প্রদান করা।
৩. নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক
উৎসাহী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নির্দেশনা ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারবে না। শিক্ষায় স্কুলের অনুষদের ভূমিকাকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। এই কারণেই স্কুলে ভালো মানের পড়ানো বিষয়গুলোতে উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের নিয়োগ করে।
স্কুলে ‘এ’ লেভেলে উন্নত মানের শিক্ষক অভাব। ‘এ’ লেভেলে বাংলাদেশ স্কুলে পড়াশোনা যথাযথ মানের হচ্ছে না বলে অভিভাবকদের অভিযোগ আছে। ‘ও’ লেভেল শেষ হওয়ার পর অভিভাবকদের টেনশন শুরু হয় যায়। অনেকে ‘ও’ লেভেলের পর পেছানো শুরু করে দেয়। ‘এ’ লেভেলে শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি। এখান থেকে অনেকে বিভিন্ন কারণে পেছনে পড়ে যায়। অনেকের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, খুঁজতে গেলে কিছু সমস্যা সামনে এসেছে। যেমন স্কুলের আর্থিক অবস্থা ও অব্যবস্থাপনা।
অভিভাবকদের মতামত হচ্ছে, বাংলাদেশ স্কুলের লেখাপড়ার মান ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও শিক্ষকদের ভালো বেতন ও শিক্ষকদের সুযোগ–সুবিধা ও স্কুলের সার্বিক শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও স্কুলের আর্থিক অবস্থা ও নতুন জায়গায় স্কুল ভবন তৈরি করা। স্কুলবাসের ব্যবস্থা ও শিক্ষার মান সম্মত করা ও বাংলাদেশের ন্যাশনাল কারিকুলাম ইংলিশ ভার্সন চালু করা। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে সমস্যা ও স্কুলের ছেলেমেয়েদের আচরণসহ বহু সমস্যায় জর্জরিত। ২০২৩–২৪ সালের স্কুলের অডিট সময়মতো করা হয়নি। বিভিন্ন খাতে অপচয় হচ্ছে। সঠিক জবাবদিহি নেই। স্কুল কমিটিতে যাঁরাই কাজ করেন, সবাই সেচ্ছাসেবী মানুষ নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে চেষ্টা করেন। সবাই সফল হতে পারেন না। কেউ কেউ সফল হয়ে যান। বিদায়ী কমিটির সবাই হয়তো চেষ্টা করেছে ভালো কিছু করার। বিভিন্ন সুবিধা–অসুবিধা থাকতেই পারে। ১৯৯৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত যাঁরা স্কুলের জন্য মাথার ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের জন্য স্যালুট। বাংলাদেশ স্কুলের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি নাজুক ও ভালো শিক্ষক আরও দরকার।
আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোনো কোন্দল বা আঞ্চলিকতা বা একগুঁয়ে আচরণ না করে টিম ওর্য়াক করতে হবে। স্কুল কমিটি ও বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং বাংলাদেশ দূতাবাস যৌথভাবে স্কুল উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে হবে।
স্কুলের এই অবস্থায় যাঁরাই নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তাঁদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে। অনেক কষ্ট করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে একজন ক্যারিশমেটিক রাষ্ট্রদূত আমরা এবার পেয়েছি। তাঁর সাহায্য ও সহযোগিতায় আমরা নতুন একটি স্কুল ভবন তৈরি করতে সক্ষম হব।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম এবং ওমানের আবাসন ও নগর পরিকল্পনামন্ত্রী খালফান বিন সাইদ বিন মুবারক আল-শুইলির মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ স্কুল, মাস্কাটের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় এবং নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য আগের বরাদ্দ করা জমির তুলনায় বড় আয়তনের এবং উপযুক্ত স্থানে একটি জমি বরাদ্দের জন্য অনুরোধ করেন। মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে স্কুলের জন্য বোশার এলাকায় আল আনসাব, ৯০৭৯ বর্গ মিটারের একটি প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। বাংলাদেশ কমিউনিটি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে স্কুল গড়ে তোলা অসম্ভব হবে না।
পাঁচজন মিলেমিশে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করে স্কুল পরিচালনা করতে হবে।
ওমানের শিক্ষামন্ত্রী অনেক কারণে বিরক্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় শত শত অভিযোগ অনেক অভিভাবকেরা করে থাকেন। পাঁচজন নির্বাচিত হয়েও অতীতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে মতের অমিল চরমে পৌঁছে যার পরিণতি ভালো হয় না।
বাংলাদেশ দূতাবাসে নতুন রাষ্ট্রদূত আসার পর অভিভাবকেরা বাংলাদেশ স্কুল নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। আমাদের নতুন রাষ্ট্রদূত ওমানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যে অনেকবার সাক্ষাৎ করেছেন।
দূর পরবাস-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ স্কুল নিয়ে নতুন রাষ্ট্রদূত রিয়ার এমডিরাল খন্দকার মিজবাউল আজিম (এনবিপি, এনপিপি, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি,) খুবই আগ্রহ। তিনি নৌবাহিনীতে থাকাকালীন সামরিক ও বেসামরিক অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমরা ১৯৯৫ সালে মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রদূত পেয়ে আজকের স্কুলটি পেয়েছি। প্রবাসী রেমিট্যান্স–যোদ্ধারা ১০ বছর অনুদান দান করে বাংলাদেশ স্কুল নির্মাণে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ও বাংলাদেশ কমিউনিটির অনেক সিনিয়র ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্কুল মাসকাট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একসময় স্কুলে লেখাপড়ার মান খুবই ভালো ছিল। এখন বাংলাদেশ স্কুলে লেখাপড়ার মান নিয়ে অভিভাবকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। প্রায় ১০০০ হাজার পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলটিতে পড়ালেখা করে। কিছু ভালো শিক্ষক আছেন। বছরের পর বছর অধ্যক্ষ ছাড়া স্কুল চলেছে। অবাক হয়ে যাই, এ কি করে সম্ভব! যা–ই হোক, বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আসার পর একজন বিদেশি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত শ্রীলঙ্কার নাগরিক নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরালকে প্রিন্সিপাল নিয়োগ দিয়েছেন। ফ্রান্সের নাগরিক ফ্লোরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক।
এই অবস্থায় তাঁর নেতৃত্ব ও নতুন নির্বাচিত পাঁচজন সদস্য বাংলাদেশ স্কুলকে আগের চেয়েও ভালো একটা অবস্থায় আনতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী। বর্তমান নতুন রাষ্ট্রদূত স্কুলকে সব ধরনের সহযোগিতার নিশ্চিয়তা দিয়েছেন। সব অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা পুনরাবৃত্তি রোধে নতুন কমিটির সবাই মিলেমিশে কাজ করবে, এই আশা ব্যক্ত করছি। গত চার বছরের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ মানসম্মত কোম্পানি দিয়ে অডিট করানোর জন্য অভিভাবকদের দাবি পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী এই স্কুল যেন আমাদের গর্ব করার মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনা ও পরিবেশ আমরা দেখতে চাই। নতুন কমিটির রাতারাতি ম্যাজিক দেখানো সম্ভব নয়। স্কুলে আধুনিক ব্যবস্থা বা ডিজিটাল যুগে যুগোপযোগী শিক্ষার পদ্ধতি অনুকরণে মাধ্যমে সঠিকভাবে পড়াশোনা হতে হবে। নতুন অধ্যক্ষকে বিনা হস্তক্ষেপে কাজ করতে দেওয়া ও স্কুলের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো ও স্কুলবাস চালু ও প্রয়োজনে স্কুল ফি বাড়াতে হবে। গরিব মেধাবী ছাত্র–ছাত্রীদের কম খরচে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া দরকার।
সব কিছু মিলিয়ে আমরা জুলাই বিপ্লবের পর এই বছর ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাষ্ট্রদূত খন্দকার মিসবাউল আজিমকে প্রবাসীদের অভিভাবক হিসাবে আমরা পেয়েছি। তাঁর আগমনে ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্ভিস দৃশ্যমান বিশাল পরিবর্তন ঘটছে। আমাদের বিশ্বাস তাঁর সঠিক দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ স্কুল মাসকাট পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
বাংলাদেশ স্কুলের সার্বিক মান উন্নয়ন হলে অভিভাবকেরা উপকৃত হবে বলে আমার ধারণা। যাঁদের কষ্টের অর্থ দিয়ে স্কুলটি গড়ে উঠেছে, সম্মানিত রেমিট্যান্স–যোদ্ধাদের নামটি স্কুলের দেয়ালে লিখতে হবে। স্কুলটি আগের সুনাম ফিরে পেলে বাংলাদেশ কমিউনিটির সবাই আনন্দিত হবেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা প্রসারিত হবে। বাংলাদেশ স্কুলের লেখাপড়ার মান প্রতিযোগিতামূলক হলে ওমান সরকার ও ওমানের নাগরিকেরা আমাদের সম্মানের সঙ্গে দেখবেন। ছেলেমেয়েদের অর্জন দেখতে পেলে অভিভাবকেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ দেখতে পাবেন। প্রত্যাশা এতটুকুই।
*লেখক; সৈয়দ মোহাম্মদ মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারি ও বাংলাদেশ স্কুল মাসকাটের প্রতিষ্ঠাকালীন ড্রেস কোড কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ সমিতি ওমানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি