সাকিব, তামিমদের গায়ে তিন শিক্ষার্থীর নকশা করা জার্সি

বাঁ থেকে মোহাম্মদ সাজিম, ইরতিজা তাহমিদ ও জাওয়াদ নাফি
ছবি: সংগৃহীত

‘জাতীয় দলের জার্সি বলে কথা! এটা তো স্রেফ একটা পোশাক নয়। এর সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের আবেগ–অনুভূতি জড়িয়ে থাকে। এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে সবারই নিজস্ব কিছু মতামত আছে। তাই রং কিংবা নকশায় একটুও খুঁত রাখার জো নেই,’ বলছিলেন ইরতিজা তাহমিদ।

২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ–আফগানিস্তান ওয়ানডে সিরিজ। এ সিরিজে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল যে জার্সি পরে খেলছে, সেটির নকশা করেছেন ইরতিজা আর তাঁর দুই বন্ধু জাওয়াদ নাফি ও মোহাম্মদ সাজিম। নিজেদের নাম দিয়েছে তাঁরা ‘দ্য ট্রায়ো’। তিন তরুণই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

করোনাকালে ঘরে বসে থাকা সময়টাতে দক্ষতা বাড়াতে অ্যাপের মাধ্যমে নকশা করা শিখেছিলেন। ছোটবেলার বন্ধু, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও তাই বেশ ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়েও একই বিভাগে পড়েন। অনেকটা শখ করেই নিজেদের ভাবনাগুলোকে প্রকাশের জন্য ‘দ্য ট্রায়ো’র যাত্রা শুরু করেন। এটি মূলত একটি ‘সোশ্যাল মিডিয়া এজেন্সি’। পাশাপাশি দলের সদস্যরা ডিজাইনিংয়েও বেশ পারদর্শী।

‘দ্য ট্রায়ো’র ইনিংসের শুরুটা কীভাবে হলো? মুঠোফোনের ওপাশ থেকে জবাব দিলেন জাওয়াদ নাফি, ‘আসলে বড় কিছু ভেবে আমরা শুরু করিনি। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা ভালো লাগত। দেশ-বিদেশের ক্রিকেট, ফুটবলেরও আমরা একনিষ্ঠ সমর্থক। আর সমর্থক হলে নিজের পছন্দের দলের জার্সির প্রতি একটা টান তো থাকেই। সেই টান থেকে আমরা বিভিন্ন দলের “কনসেপ্ট কিট” নকশা করা শুরু করি। প্রথমে জাতীয় ক্রিকেট দলের অনুশীলনের জার্সি বানানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। আর এবার তো মূল জার্সিটাই আমাদের করা! আমাদের নকশা করা জার্সি গায়ে সাকিব, তামিম ভাইয়েরা খেলছেন; এই অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’

জাতীয় দলের জার্সি নকশা করার কাজটা যে সহজ ছিল না, সে কথা তো ইরতিজার মুখে শুরুতেই শোনা হয়েছে। কঠিন এ কাজের ক্ষেত্রে তিন নকশাকারের ভাবনায় কী ছিল? উত্তর দিলেন মোহাম্মদ সাজিম, ‘নকশা করার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রঙের ব্যবহারের সঙ্গে প্যাটার্নের একটা সামঞ্জস্য রাখা চাই। বাইরের বিভিন্ন ক্রিকেট লিগের জার্সির কনসেপ্টগুলোও আমরা খেয়াল করতাম। যাঁরা জার্সির সমালোচনা করেন, তাঁরা কিন্তু বেশির ভাগই আমাদের বয়সী। তাই আমরা এমন একটা নকশা করতে চেয়েছি, যেটা সবার ভালো লাগবে। গত বছর কয়েকটা নকশা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) জমা দিই। বিসিবি কিছু পরামর্শ দেয়। আমাদের প্রথম সাফল্য আসে, যখন আমাদের নকশা করা জার্সি টেস্ট ক্রিকেট দলের অনুশীলন জার্সি হিসেবে নির্বাচিত হয়। সেটা ছিল সাদা রঙের সঙ্গে টিয়া রঙের একটা সমন্বয়। এবারের জার্সি নকশার সময় আমরা প্রাধান্য দিয়েছি গাঢ় সবুজকে।’

জাতীয় দল এ জার্সি গায়ে জড়ানোর পর থেকে মধুর সমস্যায় পড়েছেন ‘দ্য ট্রায়ো’র সদস্যরা। সে সমস্যার কথা হাসিমুখেই বললেন ইরতিজা, ‘কয়েক দিন ধরে কাছের বন্ধুদের একটাই বায়না, “আমাকে একটা জার্সি দে।” আমাদের কাছে অতিরিক্ত জার্সি নেই, কিছুতেই কাউকে এটা বোঝাতে পারছি না। তবে এই কাছের বন্ধুরা সব সময়ই আমাদের উৎসাহ দিয়েছে, আমাদের কাজকে সমর্থন করেছে। তাই এই যন্ত্রণা হাসিমুখে মেনে নেওয়াই যায়।’ হাসতে হাসতে আরও একটা ঘটনা বললেন এই তরুণ, ‘একদিন রাতে আমরা তিনজন কনফারেন্স কলে কথা বলছিলাম, ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম দুজন কথা বলি, ওদিকে তৃতীয়জনের নাক ডাকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হা হা...এভাবে অনেক রাত কেটেছে।’

আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত টি-টেন লিগের সর্বশেষ আসরে বাংলা টাইগার্স দলের জার্সির পুরো সেট নকশা করেছিল ট্রায়ো। মার্কেটিংয়ের এই তিন শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি নকশা করতে চান নিয়মিত। স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের নকশা করা জার্সিতে একদিন বিশ্বকাপের মঞ্চে তাক লাগাবে বাংলাদেশ।