আমাদের শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আছে। এটা কোনো গবেষণা বা জরিপের ফল দিয়ে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা একেকটি বিষয়ের নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন না করেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে। অভিভাবকদের নজর শুধু পরীক্ষা আর নম্বরের ওপর। সন্তান যেকোনো উপায়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেই তাঁরা খুশি। শিক্ষকদের অনেকে পরীক্ষার ফলের ওপর জোর দিয়ে ‘প্রাইভেট’ পড়ানোর ব্যবসাকে জোরদার করছেন।
মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপদ্ধতির সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে না পারলে এর আশু সমাধান হবে না। সবার আগে শিক্ষাক্রমে বদল আনা জরুরি।
প্রতিটি শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক স্তর বা যোগ্যতা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। বর্তমান শিক্ষাক্রমে সেটি মোটেও স্পষ্ট নয়। নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করানোর পদ্ধতি কী হবে, সে ব্যাপারে শিক্ষকেরা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। এ জন্য শিক্ষক-সহায়িকায় শিক্ষকের দায়িত্ব ও কাজের ধারাবাহিক নির্দেশনা থাকবে। বর্তমানে মাধ্যমিক শ্রেণির কোনো বিষয়েই শিক্ষক-সহায়িকা নেই। যখন ছিল, তখনো সেগুলো শিক্ষকদের হাতে ঠিকমতো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি কিংবা শিক্ষকদের ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীর বিষয়গত দক্ষতা নিশ্চিত করতে চাইলে চূড়ান্ত পরীক্ষার চেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে ধারাবাহিক মূল্যায়নে। একজন শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে কি না, সেটি বোঝার জন্য প্রচলিত ধারার প্রশ্নপদ্ধতিতেও বদল আনা জরুরি। শ্রেণিতে সব শিক্ষার্থীর শিখনঘাটতি বা দুর্বলতা এক রকম থাকে না। এ জন্য শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের এমনভাবে ব্যবহার করবেন, যাতে তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে। স্কুল পর্যায়ের মূল্যায়নপত্র বা রেজাল্ট কার্ডে জিপিএ ও নম্বরের গুরুত্ব খুবই কম। বরং এর বদলে সেখানে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীর সবল ও দুর্বল দিকের মূল্যায়ন ও বিবরণ থাকা দরকার।
এ ছাড়া আরও কিছু বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। যেমন, গাইডবই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। পাঠ্যবই প্রয়োজনে বড় ও বিস্তৃত হতে পারে, যাতে তা সব ধরনের প্রয়োজন মেটাতে পারে। পাঠ্যবইয়ের বিবরণ ও কাজগুলোকে ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে হবে। তাহলে শিক্ষা আনন্দদায়ক ও বাস্তবঘনিষ্ঠ হবে। শিক্ষকদের কোচিং ও ব্যাচ পড়ানোর প্রবণতাকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের মূল বেতন বাড়ানো এবং আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে নতুন করে ভাবা যেতে পারে।
তারিক মনজুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
[মতামত লেখকের নিজস্ব]