প্রশ্ন পড়ো উত্তর দাও

বাংলা: মূলভাব লেখা

প্রাথমিক বিদ্যালয়–শিক্ষার্থী মেধা যাচাই পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে ৯ নম্বর প্রশ্ন থাকবে মূলভাব লেখা প্রশ্নের ওপর। নম্বর থাকবে ৫। নিচে কয়েকটি কবিতার মূলভাব দেওয়া হলো।

প্রশ্ন: ‘সংকল্প’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: সীমাহীন বিশ্বকে জানতে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। ‘সংকল্প’ কবিতার কিশোরও তেমনই সবকিছু জানতে চায়। সে অসীম আকাশের অজানা রহস্য আবিষ্কার করতে চায়। মানুষের অসীম অতলে ছোটার কারণ সে বুঝতে চায়। দুঃসাহসীদের ছুটে চলার কারণ জানতে চায় সে। বীরেরা কেন জীবনকে অনায়াসে বিপন্ন করে, কেন বরণ করে মৃত্যুকে, বুঝতে চায় সে। এসব ভাবনা থেকে কিশোর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, সে আর ঘরে বসে থাকবে না। পৃথিবীটাকে সে–ও ঘুরে ঘুরে দেখবে।

প্রশ্ন: ‘ফুটবল খেলোয়াড়’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: ‘ফুটবল খেলোয়াড়’ কবিতায় ইমদাদ হক নামের এক ফুটবল খেলোয়াড়ের ফুটবলের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথা তুলে ধরা হয়েছে। খেলায় জয়ী হওয়াই ইমদাদ হকের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। নিজের অবস্থা যেমনই হোক না কেন, খেলায় সে কখনো বিরতি দেয় না। প্রতিদিন ফুটবল খেলে সন্ধ্যায় সে সারা শরীরে আঘাত নিয়ে মেসে ফিরে। সারা রাত তার যন্ত্রণা আর চিৎকারে সবার ঘুম হারাম হয়ে যায়। কিন্তু সকাল হলেই ইমদাদ হক আবার ফুটবল মাঠে হাজির হয়। তার চেষ্টাতেই তার দল খেলায় জয়ী হয়। নিজের কাজের প্রতি তার নিষ্ঠার কথাই বলা হয়েছে। প্রশ্ন: ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: জন্ম থেকেই মানুষ নানাভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ আমরা আপন পরিবেশ ও প্রকৃতি থেকেই লাভ করি। অসীম আকাশ আমাদের উদারতার শিক্ষা দেয়। বাতাস নিরন্তর বয়ে চলার মধ্য দিয়ে কর্মপ্রেরণা জোগায়। পাহাড়ের বিশালতা আমাদের মহত্ত্ব অর্জনের উদ্দীপনা জোগায়। সূর্য আমাদের আপন শক্তিতে বলীয়ান হতে শিক্ষা দেয়, ত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। চাঁদের মন ভোলানো মধুর হাসি দেখে আমরা মধুর ব্যবহারের শিক্ষা পাই। সবুজ বন শেখায় মনকে সজীব রাখতে। মাটি শেখায় সহনশীল হতে। পাথরের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করি দৃঢ়চেতা হওয়ার। এভাবে আমরা আমাদের চারপাশের সব বস্তু ও ব্যক্তির কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করি।

প্রশ্ন: ‘স্বদেশ’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: বাংলাদেশজুড়ে হাজারো নদ–নদী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। শস্যশ্যামলা এ দেশের মাঠে মাঠে ফসলের সমাহার। গাছে গাছে পাখির কলরব। সবকিছু মিলিয়ে এ যেন এক সুন্দর ছবি। ‘স্বদেশ’ কবিতায় একটি ছেলে মুগ্ধ হয়ে সে ছবি দেখছে আর তা মনের মধ্যে ধরে রাখছে। কারণ, মন ভোলানো এ ছবি টাকা দিয়ে কেনা যায় না। নদীর জোয়ার, নৌকার সারি, পাখির কলকাকলি সবই ছেলেটির মনে ভালোবাসার অনুভূতি জাগাচ্ছে।

প্রশ্ন: ‘নোলক’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশ। ‘নোলক’ কবিতায় কবি মায়ের গয়না খোঁজার ছলে প্রকৃতির সৌন্দর্যই তুলে ধরেছেন। আমাদের চোখে ধরা দিয়েছে ছবির মতো দেশ, দেশের নদী, পাখি, ফুল, বন ও পাহাড়। কবি সারা বাংলাদেশ ঘুরে তাঁর মায়ের হারিয়ে যাওয়া নোলক খুঁজে বেড়ান। দিনের আলো ফুরিয়ে অন্ধকার নামলেও কবি ঘরে ফিরতে চান না। কিন্তু কবির মায়ের হারিয়ে যাওয়া নোলকের সন্ধান কেউই দিতে পারে না। এই কবিতায় কবি নোলক খোঁজার বাহানায় আমাদের পরিচয় করিয়েছেন বাংলার সবুজ ও স্নিগ্ধ প্রকৃতিকে।

প্রশ্ন: ‘ঘাসফুল’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: ‘ঘাসফুল’ কবিতায় ঘাসফুলের মনের কথা প্রকাশ পেয়েছে ঘাসফুল অত্যন্ত ছোট আর সুন্দর। তারা পৃথিবীতে আনন্দ ছড়িয়ে দেয় মানুষ যেন ঘাসফুলকে গায়ে দলে নষ্ট না করে কিংবা না ছিঁড়ে, এ জন্য তারা অনুরোধ করেছে। কারণ, ফুল ছিঁড়লে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া ফুলেরও প্রাণ আছে। তাই ফুল ছেঁড়া অত্যন্ত অন্যায়।

প্রশ্ন: ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতার মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে শিক্ষা হলো একটি জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষক হলেন কাণ্ডারি। তিল তিল করে নীরবে–নিভৃতে শিক্ষক তাঁর আদর্শ দ্বারা জাতীয় আকাঙ্ক্ষার উপযোগী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলেন। সমাজ ও দেশের জন্য শিক্ষকের অবদান অপরিসীম। তাই সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সবার ওপর। বাদশাহ আলমগীর উপলব্ধি করেছিলেন যে ছাত্র তার শিক্ষককে যথাযথ মর্যাদা দিতে জানে না, শিক্ষকের সেবা করতে জানে না, সে কখনো পরিবার, সমাজ ও দেশের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।

প্রশ্ন: ‘দুই তীরে’ কবিতাটির মূলভাব লেখ।

উত্তর: ‘দুই তীরে’ কবিতায় একটি নদী, তার দুই তীরে দুজন মানুষ বাস করে। একজন ভালোবাসে তার নদীর বালুচর, শরৎকালে চকাচকিরা যেখানে ঘর বাঁধে। এর তীরে তীরে ফুটে থাকে কাশফুল। শীতের সময় হাঁসেরা এসে ভিড় করে, কচ্ছপ রোদ পোহায়। সন্ধ্যায় জেলের ডিঙি এসে ভিড়ে। অন্যজন ভালোবাসে বন, যার আছে ঘন ছায়া। সেখান থেকে একটা রাস্তা এসে মিশেছে নদীতে। নদীর ঘাটে বধূরা আসে, ছেলেরা জলে ভেলা ভাসায়। এই কবিতায় একটি নদী দুই তীরের মানুষকে এক করে মিলিয়ে দিয়েছে।

  • মো. সুজাউদ দৌলা, সহকারী অধ্যাপক
    রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা