সাত সূচকে এসএসসির ফল, পরীক্ষা এগিয়ে আনার চিন্তা

এসএসসি পরীক্ষাফাইল ছবি

নতুন শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো পরীক্ষা হবে না। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলও জিপিএর (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) ভিত্তিতে হবে না। নির্ধারিত পারদর্শিতা (নৈপুণ্য) অনুযায়ী সাতটি স্কেল বা সূচকে ফল বা রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হবে।

এই সাত স্কেলের নাম হবে অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক।

যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই প্রথমবারের মতো নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬ সালে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে এর পরের বছর থেকে সামষ্টিক মূল্যায়নের (বার্ষিক পরীক্ষা) মতো ডিসেম্বরেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, সে রকম ভাবনাও চলছে।

যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই প্রথমবারের মতো নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬ সালে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে এর পরের বছর থেকে সামষ্টিক মূল্যায়নের (বার্ষিক পরীক্ষা) মতো ডিসেম্বরেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, সে রকম ভাবনাও চলছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন এ শিক্ষাক্রম শুরু হয়। আর চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও চালু হয়েছে এ শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন)। আর কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, অর্থাৎ পরীক্ষার ভিত্তিতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন কেমন করে হবে, সেটি চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা বিভাগ। এ নিয়ে একের পর এক আলোচনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে।

বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির অর্থাৎ দুই বছরের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয় এবং তা অনেকটাই মুখস্থনির্ভর। তাই নির্বাচনী পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য তিন থেকে চার মাস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। এখানে মুখস্থনির্ভরতার বিষয় নেই।
মো. মশিউজ্জামান, এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক  

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এখন বিষয়টি গুছিয়ে এনেছে তারা। প্রক্রিয়াগত কিছু কাজ করে খুব শিগগির জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নকাঠামো চূড়ান্ত হবে। এরপর সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে সেটি।

তবে এ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হতে যাচ্ছে ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ ৩৫ শতাংশ। মোট ৫ ঘণ্টায় হবে এসএসসি পরীক্ষা। কার্যক্রমভিত্তিক (অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি) বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে হবে লিখিত অংশের মূল্যায়ন।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, রিপোর্ট কার্ডে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের ফলাফল আলাদাভাবে সাতটি স্কেলে প্রকাশিত হবে। সাতটি স্কেলের জন্য থাকবে সাতটি ছক। এগুলোর নামও ঠিক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একেকটি বিষয়ে একজন শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা বা নৈপুণ্যের স্তর কোন পর্যায়ে আছে, তা নির্ধারণ করা হবে। যেমন সর্বোচ্চ স্কেল ‘অনন্য’ বলতে বোঝানো হবে শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পারদর্শিতার চূড়ান্ত স্তর অর্জন করেছে।

আর ‘প্রারম্ভিক’ স্তর হলো সবচেয়ে নিচের স্তর। কোনো পরীক্ষার্থী যদি একাধারে দুটি বা তিনটি বিষয়ে পারদর্শিতার স্তর প্রারম্ভিকে থাকে, তবে সে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উঠতে পারবে না। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে এমন হলে ওপরের ক্লাসে উঠতে না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে ওই সাত স্কেলের মাত্রা অনুযায়ী কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে শর্ত সাপেক্ষে ওপরের ক্লাসে উঠতে দেওয়া হতে পারে।

জানতে চাইলে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আশা করছেন, খুব তাড়াতাড়ি মূল্যায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে এবং সবাইকে তা জানিয়ে দেওয়া যাবে।

এসএসসি পরীক্ষা কোন সময়ে

করোনাকাল বাদ দিলে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে আসছে বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এনসিটিবি চায়, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার কাছাকাছি ডিসেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা হোক।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির, অর্থাৎ দুই বছরের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয় এবং তা অনেকটাই মুখস্থনির্ভর। তাই নির্বাচনী পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য তিন থেকে চার মাস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। এখানে মুখস্থনির্ভরতার বিষয় নেই।

অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও বলেন, একটি অংশের মূল্যায়ন হবে বিভিন্ন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। আরেকটি অংশের মূল্যায়ন হবে কার্যক্রমের আলোকে তৈরি করা প্রশ্নের ভিত্তিতে লিখিতভাবে। ফলে প্রস্তুতির জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। তাই চাইলেই ডিসেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়। তবে পরীক্ষার সময়টি নির্ধারণ করবে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এটি তাদের এখতিয়ার। কারণ, তাদের অন্যান্য পরীক্ষাও থাকে। তাই বোর্ডগুলোর সক্ষমতার বিষয়টি দেখতে হবে।

জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের কমিটি আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রথমবারের এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬ সালেই হবে (ফেব্রুয়ারি হতে পারে)। তার পর থেকে কী হবে, সেটি এনসিটিবির সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করা হবে।